চিত্তরঞ্জন দাস: প্রেমিককে খুন করে ভাড়াবাড়ির মধ্যেই সারা রাত থাকল প্রেমিকা এবং তার দাদা। সকালে ভাড়া ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে পালাল প্রেমিকা ও দাদা। পুলিসি তদন্তে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তের ভিত্তিতে দুর্গাপুর থেকে ধৃত প্রেমিকা আর মালদা থেকে ধৃত প্রেমিকার দাদা।
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে টানাপোড়েন। তারপরই মোবাইলে থাকা ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিয়ো দেখিয়ে প্রেমিকাকে ব্ল্যাকমেল করছিল প্রেমিক। সেই কারণেই প্রেমিককে খুন করে প্রেমিকা ও তার দাদা। তদন্তে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ফরিদপুর বাউরি পাড়ার বাসিন্দা গৌতম সাহার ভাড়া বাড়ি থেকে বিহারের শাহরানপুরের বাসিন্দা এক যুবকের পচাগলা রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর থানার পুলিস। যে ঘরে পচাগলা রক্তাক্ত অবস্থায় ২৫ বছরের বিহারের যুবক ছোটন দুবের মৃতদেহ উদ্ধার হয়, সেই ঘর বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। আর তা দেখেই দুর্গাপুর থানার তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় যে এটি খুনের ঘটনা।
তদন্তে নেমে পুলিস ছোটন দুবের মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে দুর্গাপুর থানা এলাকার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পান্ডের স্ত্রী পূজা পান্ডের মোবাইল নাম্বার। সেই সূত্র ধরেই পুলিস পূজার খোঁজে তল্লাশি শুরু করে। শুক্রবার পূজা পান্ডেকে তার ধান্ডাবাগ বাগানপাড়ার বাড়ির সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিস। এরপর দুর্গাপুর মহিলা থানার পুলিস ও তদন্তকারী অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদের সামনে পূজা ও তার দাদা মিতিন মণ্ডল, ছোটন দুবেকে কেন ও কীভাবে খুন করে তা স্বীকার করে নেয়।
পূজাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিস জানতে পারে, ছোটন দুবের সঙ্গে পূজার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সেই সময় দুজনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিল ছোটন। পূজার স্বামী পূজার এবং ছোটনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে অশান্তি লেগেই থাকত। পূজার স্বামী কিশোর পান্ডে পুরুলিয়াতে সরকারি কারখানায় কাজ করেন। এখন পূজা যখন ছোটন দুবের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল, তখন ছোটন পূজাকে মোবাইলে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করছিল বলে অভিযোগ।
এখন কয়েকদিন আগেই রাজস্থানের একটি হোটেলের কর্মী পূজার দাদা মিতিন মন্ডল ধান্দাবাগে পূজাদের বাড়িতে আসে। ছোটনের ব্ল্যাকমেইলের কারণে পূজা তার দাদা মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে ছোটনকে খুনের পরিকল্পনা করে। এরপরই ছোটনকে ডাকা হয় দুর্গাপুরে। পুলিস মনে করছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলাতেই পূজা ফরিদপুরের ভাড়াবাড়িতে ছোটনের সঙ্গে ঢোকে। পরে পূজার দাদাও ঢোকে। তারপরই দুজন মিলে শ্বাসরোধ করে খুন করে ছোটনকে। রাতে ভাড়াবাড়ির মালিক সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় ভাড়াবাড়ির ঘরেই মৃতদেহর সঙ্গে রাত কাটায় প্রেমিকা এবং তার দাদা। সকালে সদর দরজার তালা খুলতেই ছোটনের মৃতদেহ ফেলে রেখে ভাড়াবাড়ির ঘর বন্ধ করে মৃত্যুঞ্জয় এবং পূজা ধান্ডাবাগের বাড়িতে ফিরে আসে।
শুক্রবার সকালে মৃত্যুঞ্জয় পালিয়ে যায় দুর্গাপুর থেকে। ওদিকে শুক্রবারই ছোটনের মোবাইলের কললিস্ট দেখে পুলিস গিয়ে পূজাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। ওদিকে মালদা থেকে পূজার দাদা মিতিন মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিস। পুলিস সূত্রে জানা গেছে, জেরায় পূজা স্বীকার করেছে যে, ছোটনের মোবাইলে তার বেশ কিছু ‘নগ্ন’ ছবি ছিল। সেই ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল ছোটন। সেই কারণেই তাকে খুন করে সে।
Bankura: তোরণ তৈরিতে কাটা রাস্তা, সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে পথেই মৃত্যু প্রসূতির!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)