বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে ১৩০টি গাছ। প্রায় দু’বছর ধরে গাছগুলো নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ইস্কোর বার্নপুর বিমানবন্দর। চালু করা যাচ্ছে না বাণিজ্যিক বিমান পরিষেবা। বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে চাপ আসছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। কিন্তু, গাছের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
ইস্কোর পক্ষ থেকে বিমানবন্দর দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেনারেল ম্যানেজার ভাস্কর কুমার বলেন, ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে এবার জেলা প্রশাসনের কাছে বিমানবন্দর চালুর জন্য সরাসরি নোটিস আসতে চলেছে। বিমানবন্দর চালু করার জন্য মন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে জেলাশাসক ও বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় আধিকারিকরা বেশ কয়েকবার প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। যদিও গাছ কাটার কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।’
বার্নপুর বিমানবন্দর লাগোয়া ধেনুয়া গ্রামে বেশ কিছু পরিবারের জমিতে রয়েছে ওই গাছগুলো। যে সব জমিতে গাছগুলো রয়েছে তার প্রায় ৬০ জন মালিককে নোটিস দিয়েছিলেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ। জমিমালিকদের কয়েকজন টাকার বিনিময়ে গাছ কাটায় সম্মত হন। কিন্তু অনেকে বিরোধিতাও করেন বলে জানান ইস্কোর জিএম। তিনি বলেন, ‘এখন সিভিল অ্যাভিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল জেলা প্রশাসনকে নোটিস পাঠিয়ে গাছ নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলবে। গাছগুলো কাটা হলে আমরা বিমানবন্দর পরিচালন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব। তাঁরা লাইসেন্স ইস্যু করলেই বার্নপুর থেকে বাণিজ্যিক বিমান চালু হয়ে যাবে।’
তিনি জানান, বিমানবন্দরের সব কাজ প্রায় বছর দুয়েক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। আসানসোলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি ইস্কোর জেনারেল ম্যানেজার ভাস্কর কুমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, ডিজেসিএ-র লিখিত নির্দেশ শিগগিরই পাঠানো হবে। সেই নির্দেশ পাওয়ার পর আমরা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’
গাছ কাটা নিয়ে কী বলছে বন দপ্তর? ডিএফও বুদ্ধদেব মণ্ডলের কথায়, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে গাছগুলো রয়েছে। মালিকরা নিজে থেকে আবেদন করলে আমরা গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারি। এখনও আমাদের কাছে গাছ কাটা নিয়ে কোনও জমিমালিক আবেদন করেননি।’ ডিএফও জানান, ক্ষতিপূরণের জন্য গাছগুলোর মূল্য জানা দরকার। সরকারি ভাবে তাঁদের কাছে ওই গাছগুলোর দাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই কাজ বন দপ্তর করে দিয়েছে বলে জানান ডিএফও।
যে জমিগুলির গাছ নিয়ে সমস্যা তার মালিকদের অন্যতম ধ্বজাধারী খাঁ, সুবল খাঁয়ের বক্তব্য, ‘প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছিলাম, গাছগুলো কাটা হলে আমাদের জমির কোনও দাম থাকবে না। বিমানবন্দর একবার চালু হয়ে গেলে আমরা একতলার উপর বাড়ি করতে পারব না। সেই জন্য আমরা বলেছি, এই জমিগুলো নিয়ে অন্যত্র আমাদের বিকল্প জমি দেওয়া হোক। অথবা জমির বিনিময়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিক। আমাদের এই দাবিতে ইস্কো কর্তৃপক্ষ সাড়া দেননি। সেজন্যই এখানকার অর্জুন, তাল, শিরীষের মতো গাছগুলো কাটা সম্ভব নয়।’
ফলে সব হয়েও ঝুলে রয়েছে বিমানবন্দর চালুর কাজ। শেষমেশ জল কোন দিকে গড়ায় তা জানতে ডিজিসিএ-র নোটিসের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।