ফের চিন্তার কারণ চিন! এ বারও সেই শ্বাসনালীর সংক্রমণ। করোনা অতিমারীর সময়ে চিন থেকেই গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছিল সংক্রমণ। সেই কোভিড এখন অতীত হলেও ফের এক দফা শ্বাসনালীর সংক্রমণে ভুগতে শুরু করেছেন চিনের বাসিন্দারা, যা নিয়ে প্রবল উদ্বেগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (হু)। হাজারও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নিউমোনিয়া নিয়ে। চেনার পাশাপাশি অচেনা জীবাণুর হামলায় শ্বাসনালীর সংক্রমণ সেখানে ঘরে ঘরে। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কলকাতার চিকিৎসকরাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাসনালীর সংক্রমণের এই ভরা মরসুমে চিন থেকে এ দেশে জীবাণুর পাড়ি দেওয়া অসম্ভব নয়। চিনের উত্তরাংশে সংক্রমণের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। অচেনা জীবাণুর হামলায় নিউমোনিয়ার শিকার হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। হু-সহ স্বাস্থ্যমহলের বড় অংশেরই চিন্তা, এই প্রকোপ ফের করোনার মতোই কোনও নতুন জীবাণুর সংক্রমণ নয় তো! যদিও সে দেশের প্রশাসন জানিয়েছে, মাইকোপ্লাজ়মা নিউমোনি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যেমন হচ্ছে, তেমনই দেদার হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) এবং কিছু করোনার সংক্রমণও।
বেজিং-সহ বিভিন্ন বড় শহরের বড় হাসপাতালগুলিতে আউটডোর-ইন্ডোর মিলিয়ে গড়ে রোজই শ্বাসনালীর সংক্রমণে কাবু হাজার দেড়েক রোগীর ভিড় হচ্ছে, যার মধ্যে শিশুরাই বেশি। কোনও অচেনা জীবাণুর কথা অবশ্য সরকারি ভাবে অস্বীকার করেছে চিনা প্রশাসন।
তাও উদ্বেগ কমছে না। ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষের কথায়, ‘চিন্তার যথেষ্টই কারণ আছে। করোনার স্মৃতি এখনও টাটকা। যে ভাবে ২০২০-তে চিন থেকে সর্বত্র ছড়িয়েছিল সংক্রমণ, এ বারেও তেমনটা যে হবে না, কে বলতে পারে!’
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘আজকাল যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই মসৃণ যে পৃথিবীর কোনও একটি অংশে কোনও একটি সংক্রমণের প্রকোপ দেখা দিলে তা দুনিয়ার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকেই। আর চিনের সঙ্গে ভারত, কলকাতার বিমান যোগাযোগ যথেষ্টই ভালো। ফলে আশঙ্কা রয়েই যায়।’
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অলোকেশ কোলে জানাচ্ছেন, যে ভাবে অল্পবয়সিরা জ্বর আর নিউমোনিয়া নিয়ে চিনে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এবং কিডনির সমস্যা কিংবা ডায়াবিটিস না-থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে বিপুল সংখ্যক রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাতে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। আর এক ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বেশি চিন্তিত চিনা প্রশাসন স্পষ্ট করে সবাইকে সব কিছু জানাচ্ছে না বলে।
তাঁর বক্তব্য, ‘এই মুহূর্তে ছবিটা পরিষ্কার নয়। কোনও নতুন রেসপিরেটরি ভাইরাস এল কিনা, আগে সেটা জানা দরকার। নেপথ্যে মাইকোপ্লজ়মা, ফ্লু, আরএসভি ইত্যাদির মতো এক বা একাধিক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকতেই পারে।’ তবে সিদ্ধার্থর পর্যবেক্ষণ, চিনে এখনও এই সব সংক্রমণে মর্টালিটি রেট বা মৃত্যুহার বেশি নয়। ফলে মহামারি বা অতিমারীর আশঙ্কা কমই।
আর এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ রোহিত কাপুর বলেন, ‘চিন্তাটা হলো, চিনে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হামলাকারী জীবাণুটি চিহ্নিতই হচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে চিন্তার। মনে রাখতে হবে, অতিমারী পর্বের যাবতীয় বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরে চিনের বাসিন্দারা এই প্রথম শীতের মরসুম দেখছে। মাস্ক ব্যবহার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় শ্বাসনালীর সংক্রমণ গত দু’বছর সেখানে তেমন দেখা যায়নি। এখন এই সংক্রমণের মরসুমে চিনাদের কোনও বর্মই নেই। ফলে সংক্রমণের গ্রাফটাও চড়া।’