প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুসারে, শনিবার সুন্দর যে ভাবে তার মাহুত দীপক কার্জিকে পিষে মেরেছে, তা নিয়ে তার শরীরী ভাষায় এতটুকু অনুশোচনার লক্ষণ নেই। বরং সে আরও বেয়াড়া হয়ে উঠেছে। তার এখন একটাই লক্ষ্য, যেভাবেই হোক, বুনো হাতিদের দল থেকে পটিয়ে কোনও মাদি হাতিকে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়ে সঙ্গম করা। ঠিক এই জায়গাতেই সুন্দরের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বনকর্তারা।
কারণ আজন্ম মানুষের সংস্পর্শে থাকা কুনকি হাতিদের কোনও ভাবেই সহ্য করতে পারে না বুনো দাঁতাল ও মাকনারা। ফলে বুনো হাতিদের দলের কোনও মাদিকে যদি সুন্দরের মনে ধরে এবং সে তাকে কাছে টানার চেষ্টা করে, তবে নির্ঘাত তাতে রুখে দাঁড়াবে দলের সর্দার কোনও দাঁতাল অথবা মাকনা। সেক্ষেত্রে লড়াই হয়ে উঠবে প্রাণঘাতী। কারণ তখন আস্ত একটি দলের যত পুরুষ হাতি রয়েছে, তারা সম্মিলিত ভাবে হামলা চালাবে একাকী সুন্দরের উপরে।
এই মুহূর্তে জলদাপাড়ার জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে অবস্থান করছে বেশ কয়েকটি বুনো হাতির দল। সেই রকমই একটি দলের খুব কাছে থেকে সুন্দর বনকর্মীদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলায় মেতেছে। আসলে কুনকি হাতির পিঠে বসে ঘুমপাড়ানি গুলির বন্দুক তাক করে রয়েছেন বনকর্মীরা। আর তাঁদের দেখামাত্রই, তেড়ে আসছে বুনোদের দলের সদস্যরা। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই সুন্দর ঘোল খাওয়াচ্ছে বনকর্মীদের।
বন দপ্তরের নথি অনুসারে, জলদাপাড়ার অন্যতম বিশ্বস্ত কুনকি হাতি সুন্দরমণির সন্তান সুন্দর বেশি আদর পেয়ে ছেটোবেলা থেকেই বখাটে হয়ে ওঠে। মাকনা হাতি হওয়ায় বাইরের দাঁত না গজানোয় শেষবিন্দু পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে সে বেশ সুঠাম গড়নের। এর আগেও মস্তির সময়ে বেশ কয়েক বার পালিয়ে গিয়েছে সে। পরে অবশ্য ফিরেও এসেছে। কিন্তু এই যাত্রায় সুন্দরের আচরণ অনেকটাই অচেনা ঠেকছে বনকর্তাদের।
পুরুষ হাতিদের জীবনশৈলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মস্তি এলে হাতিদের কানের পিছনের দু’টি গ্রন্থি ফুলে ওঠে এবং সেখান থেকে এক ধরনের রস বের হতে থাকে। সুন্দরের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেন অভিজ্ঞ মাহুত দীপক কার্জির নজর এড়িয়ে গেলো, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না বনকর্তারা।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক নভজিত দে বলেন, ‘কোনও কোনও পুরুষ হাতির মস্তি ছয় মাস পর্যন্ত চলে থাকে। সুন্দরের ক্ষেত্রে তা কতদিন স্থায়ী হবে, তা বলা দুষ্কর। আমরা ওকে পাকড়াও করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু সুন্দরকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না।’