চারধামে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করার সময়ে উত্তরকাশীতে সিল্কইয়ারা টানেলে গত ১২ নভেম্বর ঘটে বিপত্তি। টানেলের মধ্যে আচমকা ধস নামে। সুড়ঙ্গে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। ১৭ দিন পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনার পরে তাই আলোচনায় উঠে এসেছে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পও। বিশেষ করে প্রথম থেকেই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছেন হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা।
উত্তরকাশীর ঘটনার পরে তাঁরা আরও বেশি সরব হয়েছেন। যদিও সেবক-রংপো নিয়ে আশঙ্কা এক কথায় নাকচ করে দিয়েছেন প্রকল্পের নির্মাণ সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন (ইরকন)। প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মহেন্দ্র সিং বলেন, ‘প্রথম থেকেই সমস্ত ধরনের সতর্কতা মেনে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। সবচেয়ে অত্যাধুনিক কারিগরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে। ফলে উদ্বেগের কিছু নেই।’
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে সেবক রংপো রেল প্রকল্প। এই রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘প্রতিটি সুড়ঙ্গের মুখে অ্যাম্বুল্যান্স চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রস্তুত থাকে। সুড়ঙ্গে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও আলোর ব্যবস্থা থাকে। সেবকে উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত রাখা থাকে। এর বাইরে রেশ ও ইরকনের কর্তারা নিয়মিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন।’ ইরকনের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর বলেন, ‘এই ধরনের প্রকল্পে নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, প্রকৃতির রোষের মুখে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে সেই ব্যাপারে সন্দিহান হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু। তিনি বলেন, ‘গত মাসে সিকিমে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলো, তাতে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পই ভেসে গিয়েছে। ফলে ভূমিকম্প হলে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের কী হাল হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’
ইরকনের কর্তাদের দাবি, উত্তরকাশী-সহ দেশের অন্যত্র সুড়ঙ্গ তৈরির ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তার চেয়ে সেবক-রংপো অনেক আধুনিক এবং নিরাপদ। যে সমস্ত এলাকায় সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে এখনও পর্যন্ত কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে যে সব দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দেশের অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। যদিও ইরকনের যুক্তি মানতে একেবারেই নারাজ হিমালয়ান ফরেস্ট ভিলেজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
সেবক থেকে রংপো পর্যন্ত এই রেল প্রকল্প এলাকায় বেশ কিছু বনবস্তি রয়েছে। প্রথম থেকেই প্রকল্পটি নিয়ে তাঁদের আপত্তি ছিল। সংগঠনের পক্ষে সৌমিত্র ঘোষ বলেছেন, ‘যে ভাবে বনবস্তিগুলিকে বসবাসের অনুপযুক্ত করে রেল প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে, তা মানা যায় না। প্রকল্প তৈরির ক্ষেত্রে কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাও প্রকল্পের আধিকারিকেরা জানাতে পারেননি।’