দ্বিতীয়বার অসাধ্য সাধন
সিউড়ীর একটি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সাড়ে চার ইঞ্চির পূর্ণাঙ্গ যোনিপথ স্থাপন করে নজির গড়লেন চিকিৎসক। যুবতীর পরিবারের দাবি, রাজ্যের ও ভিনরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেও হয়নি কোনও সুরাহা। অবশেষে সিউড়িতে এসে মিলল সমাধান। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তৈরি করা হল নাবালিকার যোনিপথ। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। এর আগেও একবার চিকিৎসক ডঃ দেবাশিস দেবাংশি তিন ইঞ্চির কৃত্রিম যোনিপথ তৈরি করে অসাধ্যসাধন করেছিলেন। তবে এবার সাড়ে চার ইঞ্চির পূর্ণাঙ্গ যোনিপথ তৈরি করে নজির গড়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই হাসি ফুটেছে যুবতী ও তাঁর পরিবারের মুখে।
জন্ম থেকেই যোনিপথ নেই। কী হবে তার ভবিষ্যৎ? কী ভাবেই বা হবে তাঁর বিয়ে? তাই নিয়েই দীর্ঘ ১০ বছর ধরে চিন্তায় ছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার এক যুবতীর পরিবার । পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী তিনি। এই সমস্যার সমাধানের জন্য যুবতিকে নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটেছেন তাঁর পরিবারের লোক, গিয়েছেন ভিন রাজ্যেও। তবে প্রতিটি জায়গাতে গিয়েই এক কথায় আশাহত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে যুবতী আর তাঁর পরিবারকে। এমন সময় সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সিউড়ির একটি নার্সিংহোমের কথা জানতে পারে যুবতীর পরিবার। সেই নার্সিংহোমে অন্যান্য জায়গার মতো আশাহত হতে হয়নি তাঁদের। কারণ দীর্ঘ দুই মাসের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারর মাধ্যমে তৈরি করা হল নাবালিকার যোনিপথ।
অসাধ্য সাধন করেছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেবাশিস দেবাংশী। প্রায় দুই মাস চিকিৎসা চলার পর অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তৈরি করা হয় যোনিপথ । এরপর ডিসেম্বর মাসে পুনরায় পরীক্ষা করে দেখা যায় সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। নাবালিকা পেয়েছেন প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চির গভীরতা সম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ যোনিপথ। স্বাভাবিকভাবেই বর্তমানে কিছুটা নিশ্চিন্ত ওই পরিবারের সদস্যরা।
কী বললেন সেই যুবতী?
প্রসঙ্গত, জুন মাসে ইলামবাজার থানায় এলাকার এক নাবালিকার কৃত্রিম যোনিপথ স্থাপন করে নজির গড়েছিলেন এই চিকিৎসক। তবে সেই নাবালিকার যোনিপথের গভীরতা ছিল তিন ইঞ্চি। তবে দ্বিতীয়বারের এই অস্ত্রোপচার সাড়ে চার ইঞ্চির একটি পূর্ণাঙ্গ যোনিপথ তৈরি করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যুবতী জানান, ‘রাজ্য ও ভিনরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছি কিন্তু কোন সুরাহা পাইনি। এমনকি কেউ কোনওদিন ভরসাও দেয়নি। অবশেষে সুরাহা পেলাম বীরভূম এসে। সত্যিই এই চিকিৎসার জন্য আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলাম আমি।’
কী জানালেন চিকিৎসক?
অন্যদিকে, চিকিৎসক দেবাশিস দেবাংশী বলেন, ‘এই রোগীনী আমার কাছে ‘অ্যাবসেন্ট ভ্যাজাইনা’ নিয়ে এসেছিল। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম ‘মেয়ার রকিট্যানস্কি কুষ্টার হাউসার সিন্ড্রোম বা এমআরকেএইচ সিন্ড্রোম। যা খুব কম জনের দেখা যায়। মূলত এই ক্ষেত্রে রোগিনীর গর্ভাশয়টি প্রায় থাকে না বললেই চলে।’ তিনি জানান, যোনিপথ থাকে না তবে ওভারি ও টিউবগুলো থাকে। এই কারণেই এই রোগিনীর যোনিপথ তৈরি করতে ম্যাকিন্ডোস্ অপারেশন করা হয়েছে। যা একটু ঝুঁকির এবং কঠিন হওয়ার কারণে সচরাচর সব নার্সিংহোম এ করা হয় না। ধাপে ধাপে অপারেশন টা করা হয়েছে। সময় লেগেছে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। তবে এই অপারেশনের পর সে তার যৌনজীবন স্বাভাবিক পেলেও, নিজের গর্ভে সন্তান ধারণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে স্যারোগেসি উপায়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেতে পারেন তিনি।