শ্রমিকরা টানেলে কী ভাবে ছিলেন? তা দেখার জন্য বিশেষ গর্তের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়েছিল ‘ফ্লেক্সি প্রো ক্যামেরা’। আর তা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন সিঙ্গুরের দৌদীপ। তাঁর ক্যামেরায় তোলা ছবির মাধ্যমে গোটা বিশ্ব জানতে পারে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিক প্রত্যেকেই সুস্থ।
টানেলে বদ্ধ অবস্থায় শ্রমিকরা কী ভাবে রয়েছেন, কী খাওয়া দাওয়া করছেন-তা নজরে রাখা সম্ভব হয়েছে এই ক্যামেরার মাধ্যমেই। ৪১টি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলেন সিঙ্গুরের প্রত্যন্ত গ্রামের এই যুবক। ছেলের কর্তৃত্বে মা-বাবা সবিতাদেবী এবং দীনেশ চন্দ্র খাঁড়ার চোখে জল।
সিঙ্গুরের মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন দোদীপ। এরপর নালিকুল বাণীমন্দির থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর হুগলি টেকনিক পলিটেকনিক কলেজে থেকে ডিপ্লোমা করেন তিনি। পরবর্তীতে হাওড়ার ধুলাগড়ের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বি টেক পাশ করেন দোদীপ এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার কনস্ট্রাকশনের পাইপলাইনের কাজের সঙ্গে যুক্ত।
সুড়ঙ্গের ধসের মধ্য দিয়ে ক্যামেরা পাঠানোর কাজ দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। ওই বেসরকারি সংস্থার হয়ে সেই কাজ করেন দৌদীপ। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। মাঝেমধ্যেই ভেঙে পড়ছিল চাঙড়, লোহার রড। তার উপর ছিল যন্ত্রের কম্পন। কিন্তু, ৪১ জনের প্রাণ রক্ষার গুরুদায়িত্ব যে অনেকটাই তাঁর উপর, তা বুঝতে পেরেছিলেন এই বঙ্গসন্তান।
এরপরেই এই কাজে সফল হওয়ার জেদ চেপে বসে। দৌদীপ জানান, ‘প্রথম যখন ক্যামেরায় তাঁদের ছবি দেখতে পাই, সেই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।’ উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর দৌদীপ এবং তাঁর টিমকে জাদুর কি ঝাপ্পি দেন ওই শ্রমিকরা। এর থেকে বড় প্রাপ্ত কি আর হতে পারে!
দ্রৌদীপের বাবা দীনেশ বাবু বলেন, ‘উত্তরাখণ্ডের প্রশাসন দেরাদুনে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছেলেকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। পাইপের মধ্য দিয়ে ক্যামেরা পৌঁছে দিয়েছিল ছেলে ও তাঁর বন্ধু বাল চন্দ্র খিলাড়ি। যদিও প্রথম দিন তাদের বেগ পেতে হয়। ক্যামেরা বারো মিটার পৌঁছতেই আটকে যায়। পরে দমকল পলি সরিয়ে দিতেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যায় ক্যামেরা। শ্রমিকরা কী অবস্থায় রয়েছেন, তা প্রতিদিন চারবার করে দেখাতে হত ক্যামেরার মাধ্যমে।’
দৌদীপের মা সবিতাদেবী বলেন, ‘ছেলেকে পড়াশোনা শেখাতে গিয়ে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই বেশ ভীতু ছিল ও। সেই ছেলেই আজ এত সাহস দেখাল যে গর্বে বুকটা ফুলে উঠছে। সফল হওয়ার পরেই ফোন করে বলেছিল, ‘মা আমি পেরেছি।’