হৃদয়পুরের সেই মনুয়ায় এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শ্যামা’র ভূমিকায়। রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যে মনুয়া মজুমদার শ্যামার চরিত্রে অভিনয় করছেন। বেশ কিছুদিন তালিম নেওয়ার পর শুক্রবার রাতে বর্ধমানের উৎসব ময়দানে তাঁর প্রদর্শন মানুষের মন জয় করল। ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’, ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়’-একাধিক গানে নৃত্য পরিবেশন করে মোহিত করলেন দর্শকদের। একক নৃত্যেও দেখা গেল মনুয়াকে।
সংশোধনাগারের আবাসিকদেল মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয় কারা দফতরের পক্ষ থেকে। সেই লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আবাসিকদের নিয়ে কাজ করছেন বর্ধমানের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মেহবুব হাসান।
মেহবুববাবু জানান,মনুয়া এখন নিয়মিত গান ও লেখা নিয়েই ব্যস্ত। রবীন্দ্র রচনাবলি ও রবীন্দ্র নৃত্য নিয়ে তিনি বেশ আগ্রহী। সংশোধনাগারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন মনুয়া। শিল্পের সঙ্গে নিজে জড়িয়ে থাকার পাশাপাশি অন্যদেরও উৎসাহ জোগান তিনি।
সম্প্রতি তিনি নিজে একটি ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছেন। সেখানে সংশোধনাগারের অনান্য আবাসিকরা লেখালেখি করেন। তাঁদের কবিতা,গল্প এবং প্রবন্ধ ছাপা হয় এই ম্যাগাজিনে। শুক্রবার বর্ধমানের উৎসব ময়দানে মনুয়ার নৃত্যনাট্য মুগ্ধ হন দর্শক। যখন মঞ্চে তিনি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করছেন সেই সময় দর্শকাসনে থিকথিকে ভিড়। অথচ এই মনুয়ার লোমহর্ষক অতীত কাহিনী এখনও মনে পড়লে শিউরে ওঠেন অনেকেই।
২০১৭ সালে বারাসাতের হৃদয়পুরে পরিকল্পনা করে প্রেমিককে দিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কী ভাবে স্বামীকে মারতে হবে তাও বলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মনুয়ার বিরুদ্ধে। তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়েছে। সেই মনুয়াই এখন সংশোধনাগারে বন্দিদের অনেকের ‘শিক্ষিকা’। কোন গানে কী স্টেপ বসবে, আবৃতিতে কোথায় ভুলত্রুটি রয়েছে কিনা, তা নিজের হাতে শেখাচ্ছেন মনুয়া।
বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি (কারা) শুভব্রত চট্টোপাধ্যায় জানান, সংশোধনাগারে রাখার উদ্দেশ হল বন্দিদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা। অপরাধমূলক ভাবনা ছেড়ে তাঁরা যাতে সমাজের আর পাঁচজন মানুষের সঙ্গে থাকতে পারেন সেই জন্য উৎসাহ দেওয়া। মনুয়ার ক্ষেত্রে সেই উদ্দেশ্যে অনেকাংশেই সফল হয়েছে। রবীন্দ্র নৃত্যকে আঁকড়ে নিজের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করেছেন তিনি। আইনি কারণে মনুয়ার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।