Uttarkashi Tunnel Disaster : শঙ্খ-উলু ও মিষ্টিমুখে মানিককে বরণ গ্রামে – cooch behar manik talukdar returned home after being stuck for 17 days in uttarkashi tunnel disaster


এই সময়, কোচবিহার: এর আগেও অনেকবার কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফিরেছেন। তবে প্রতি মাসে নয়, তিন-চার মাস অন্তর। তাঁর অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখনও দাঁড়িয়ে থাকেননি গ্রামবাসীরা। নতুন শাড়ি পড়ে ফুলের মালা হাতে কখনও অপেক্ষা করেননি স্ত্রীও। বিয়ের ২২ বছর পরে শুক্রবার এক আলাদা অনুভূতি হল মানিক তালুকদারের। এ দিন সন্ধ্যায় গ্রামের মহিলারা গানের তালে তালে কোমর দোলালেন।

স্বামী ঘরে ফিরতেই মিষ্টিমুখ করালেন স্ত্রী সোমা। উত্তরকাশীতে টানেল বিপর্যয়ে ১৭ দিন আটকে পড়া আরও চল্লিশ জনের সঙ্গে আটকে পড়েছিলেন কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামের মানিক। জীবন-মৃত্যুর দোলার মধ্যে তাঁকে অন্যদের সঙ্গে উদ্ধার করে প্রশাসন। মঙ্গলবার উদ্ধারের পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ঋষিকেশ হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে পৌঁছন তিনি।

বাংলার প্রতিনিধিরা সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। শুক্রবার সকালে দিল্লি-বাগডোগরা বিমানে ফেরার টিকিট কেটে দেন তাঁরা। দুপুরে শিলিগুড়ি বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে পৌঁছন কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামের বাড়িতে। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে। টুনির আলো, শঙ্খধ্বনি আর মহিলাদের উলুর শব্দে তখন অন্যরূপ চেনা বাড়িটার।

খানিকটা ঘোর কাটার পরে মানিক বলেন, ‘এ যেন পুনর্জন্ম! সকলের ভালোবাসা, আশীর্বাদ ছিল তাই বিপদের মুখে পড়েও ফিরে এসেছি। এর আগেও বাড়ি এসেছি কতবার। কিন্তু এ বারের ফেরাটা আজীবন মনে থাকবে।’ শ্বশুরবাড়ি ও নিজের পরিবারকে না জানিয়ে পাশের গ্রামের সোমা তালুকদারকে বিয়ে করেছিলেন মানিক। প্রেমকে স্বীকৃতি দিতে অনেক বাধা, হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।

সেই থেকেই চ্যালেঞ্জ নিতে অভ্যস্ত তিনি। আজ সেই মনের মানুষ ঘরে ফিরছে বলে সোমা, আলমারি থেকে বের করে গায়ে জড়িয়েছেন পুজোয় কেনা লাল টুকটুকে শাড়ি। স্বামীর পছন্দের কাতলা মাছের ঝোল ও মাছের তেল দিয়ে বড়া করেছেন। মানিক যখন টানেলে আটকে পড়েছিলেন তখন বাড়িতে থাকা তাঁর স্ত্রী ও ছেলের পাশে এক পরিবার হয়ে দাঁড়িয়েছিল গোটা গ্রাম।

আজ তাই ব্যান্ড পার্টি, ফুল, মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন হারান, জটু, কমল ও সরস্বতীরা। তাঁরা বলেন, ‘গ্রামের উৎসবেও এত আনন্দ হয়নি কখনও।’ কালীপুজোর আগের রাতে নাইট ডিউটিতে গিয়ে টানেলে আটকে পড়েছিলেন মানিক। স্ত্রীর সঙ্গে সেই শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন তিনি। প্রথম ১৮ ঘণ্টা চরম উদ্বেগে কেটেছে। শুকনো খাবার, বিস্কুট যা ছিল তাই দিয়ে কোনও মতে চলেছে।

Uttarakhand Tunnel Collapse Rescue : ‘ঠাকুর কথা রেখেছেন!’ ১৭ দিনের যুদ্ধজয় শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস বাংলার ৩ পরিবারে
এরপর পাইপ লাইনের মাধ্যমে খাবার এসেছে। কাটাকুটি, তাস খেলে সময় কেটেছে তাঁর। এক ঘেয়েমি কাটাতে যোগ ব্যায়াম, মর্নিং ওয়াক করতেন রোজ। তবে তাঁর মন পড়ে থাকত বলরামপুরে। সোমা বলেন, ‘ঘরের মানুষ ঘরে ফিরেছে৷ আর কাজে পাঠাব না।’ মানিক অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যদি ছেলেকে একটা কাজ দেয় তাহলে আর ভিনরাজ্যে যাবেন না।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন সংবাদমাধ্যমের সামনে বলেন, ‘১৭ দিন টানেলে থাকার পরে সুস্থ ভাবে ফেরানো অসাধারণ ব্যাপার। যাঁরা এই রেসকিউ অপারেশন করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। আমাদের দেশ অসাধারণ। ভারত অবিশ্বাস্য দেশ।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *