Calcutta High Court : ত্রিফলা দুর্নীতিতে বিদ্ধ জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ, কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত কলকাতা হাইকোর্টের – calcutta high court judge pointed out that a cartel had formed between government counsel police litigants at the jalpaiguri circuit bench


অমিত চক্রবর্তী
প্রশ্নটা উঠছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। সেটা আরও জোরালো হয়, একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণের পরে। বেঞ্চ ইঙ্গিত দিয়েছিল, জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলি, পুলিশ, মামলাকারী-সবার মধ্যে একটা চক্র গড়ে উঠেছে। এমনকী সরকারি কর্মীদের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।

শুধু একটি মামলা নয়, সার্কিট বেঞ্চে জামিন ও আগাম জামিন সংক্রান্ত আরও বেশ কয়েকটি মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে হাইকোর্টই। বেশ কয়েকটি জামিন ও আগাম জামিন সংক্রান্ত মামলার নথি খতিয়ে দেখে ৩০ নভেম্বর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের লিগাল রিমেম্ব্রান্সারকে নির্দেশ দেয়, একটি প্রতারণার মামলায় কী করে আগের আগাম জামিনের আবেদন খারিজের নথি গোপন করা হলো, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি কৌঁসুলির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেটাও জানাতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী মহলের একটা বড় অংশ মনে করছেন, বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ দীর্ঘদিনের একটা বড় অনিয়মকেই সামনে এনে দিয়েছে। আসলে কলকাতা হাইকোর্টের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ ঘিরে কার্যত গ্যাংগ্রিন তৈরি হয়েছে বলে মত ওই আইনজীবীদের। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার থেকে সার্কিট বেঞ্চে ফৌজদারি মামলাগুলির বিচার করতে বসছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। দুর্নীতি ইস্যুতে এই বেঞ্চ কী পদক্ষেপ করে, সে দিকে তাকিয়ে আইনজ্ঞ থেকে বিচারপ্রার্থীরা।

কেন আইনজীবীদের একটা বড় অংশ অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন?

বিচারপতি বসাক ও বিচারপতি সব্বার রশিদির বেঞ্চ শুধু প্রতারণার মামলা নয়, এমন বেশ কয়েকটি মামলার নথি আদালত সামনে এনেছে, যেখানে একইভাবে মাদক মামলায় অভিযুক্ত আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে জামিন বা আগাম জামিন পেয়ে গিয়েছেন। আদালতের বক্তব্য, গোটা বিষয়টিতে সরকারি আইনজীবী ও পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে।

অন্তত চারটি ফৌজদারি মামলার উদাহরণ সামনে এনে বেঞ্চ রাজ্য পুলিশের এডিজিকে (উত্তরবঙ্গ) নির্দেশ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ করতে। জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের রেজিস্ট্রারকে গোটা বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ১৭ নভেম্বর হাইকোর্টের নির্দেশে রেজিস্ট্রার এফআইআর দায়ের করেন তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। হাইকোর্ট আগের এমন যাবতীয় সন্দেহজনক মামলার নথি আগামী দিনে আদালতের কাছে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।

আইনজীবীদের অভিযোগ, সার্কিট বেঞ্চে বিশেষ করে ফৌজদারি মামলা ঘিরে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কলকাতায় বসে মামলার বিচার করতে গিয়ে বারংবার কেস ডায়েরি চেয়ে পাঠালেও সার্কিট বেঞ্চ থেকে সেই মামলার নথি কোর্টে পৌঁছয় না, এমন একাধিক উদাহরণ রয়েছে। আদালতের কাছে এমন নথিও এসেছে, যেখানে এক প্রভাবশালীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের নাম প্রায় প্রতিটি জামিন বা আগাম জামিন মামলাতেই সরকারি আইনজীবী হিসেবে থাকছে।

পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে একটি মাদক মামলায় একটি ডিভিশন বেঞ্চ শুনানির মধ্যে ফোনে ধরেছিল সার্কিট বেঞ্চের সংশ্লিষ্ট অফিসারকে। মোবাইলের স্পিকার অন অবস্থায় ওই অফিসার এক সরকারি কৌঁসুলির নাম করে জানিয়ে দেন, তিনি না বললে নথি না পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া আছে। পরবর্তীতে ওই আধিকারিককে সতর্ক করা হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *