বিচারপতিদের প্রশ্ন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা একটি জেলের ভিতরে কী করে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকল? এক জন বিচারাধীন বন্দিকে পর পর গুলি করে খুনই বা করা হলো কী ভাবে তা জানাতে আজ মঙ্গলবার আইজি (কারা) উমাশঙ্কর সিংকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের ৩ সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। সেই রিপোর্ট পেলে অবশ্যই জানানো হবে আদালতকে।
অন্য দিকে, ছেলের খুনের খবর পেয়ে সোমবার সকালে আমন সিংয়ের বাবা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন পুলিশ অফিসার উদয় ভবন সিং ও দাদা অজয় সিং ধানবাদে এসে পৌঁছন। সেখানে তাঁরা দাবি করেন, এই খুন পূর্ব পরিকল্পিত। বাবা উদয় ভবন বলেন, ‘আমন ভালো ছেলে ছিল। ওকে জোর করে অপরাধী তৈরি করা হয়েছে। ৩০টি মামলা দায়ের হয়েছে।’ উদয় ভবনের প্রশ্ন, ‘জেলে যেখানে মেটাল ডিটেক্টর ও সিসিটিভি আছে, সেখানে অস্ত্র কী করে ঢুকল?’ দেহ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা ও আমনের দাদা।
আমনের দাদা অজয় সিং বলেন, ‘ছোট থেকে ভাই পড়াশোনায় ভালো ছিল। ওর ইচ্ছে ছিল পুলিশ হবে। কিন্তু অদ্ভূত ভাবে ওর নামে একাধিক অপরাধের মামলা জুড়ে গেল।’ জানা গিয়েছে, ২০২২-এর ৭ মে ধানবাদ জেল থেকে বিহারের দুমকা জেলে অন্য একটি মামলায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল আমন। তাকে খুন করা হতে পারে বলে আমন জানিয়েছিল। আমনের স্ত্রী বেবি দেবীও তখন আদালতে আবেদন করে জানিয়েছিলেন, তাঁর স্বামী প্রাণহানির আশঙ্কা করছে।
সূত্রের খবর, ধৃত সুন্দর মাহাতোর আসল নাম রাজীব মাহাতো। প্রশ্ন উঠেছে, এই খুনের জন্য পরিকল্পনা করে নাম ভাঙিয়ে কি তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল? আরও জানা গিয়েছে, খুনের আগেই জেলে পাগলাঘণ্টি বাজানো হয়। অর্থাৎ খুনের আগেই হয়তো ধস্তাধস্তির কোনও ঘটনা ঘটেছিল। জেল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আমন সিংকে গুলি করা হয় তিনটে বেজে ৩ মিনিটে। তিনটে বেজে ১৬ মিনিটে তাকে ধানবাদের নির্মল মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এই খুনের ঘটনার পর ধানবাদে ১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের একটি অডিয়ো ভাইরাল হয়। ভাইরাল ওই অডিয়োতে (সত্যতা যাচাই করেনি ‘এই সময়’) আশিস রঞ্জন নামে একজনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘এই খুনের দায় আমি নিচ্ছি। আমি এই ঘটনা ঘটিয়েছি। ওই আমাকে অস্ত্র দিয়েছিল। সেই অস্ত্র দিয়েই ওকে মারা হয়েছে।’ আশিসের কথায় আরও শোনা গিয়েছে, ‘আমি তাকে (আমন) বড় ভাইয়ের মতো দেখতাম। কিন্তু সে আমাকে মারতে চাইছিল।’ ঝাড়খণ্ডের আইজি (কারা) উমাশঙ্কর সিং বলেন, ‘এআইজি পদমর্যাদার তিন আধিকারিক ধানবাদ জেলে এদিন দুপুরে গিয়েছেন। তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন।’ খুনে অভিযুক্ত সুন্দর আপাতত ধানবাদ জেলেই বন্দি। তাকে হেফাজতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।-