অযোধ্যা পাহাড়, গড় পঞ্চকোটের মতো পুরুলিয়ার পর্যটনস্থলগুলিকে আগেই প্লাস্টিকমুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তা অনেকটাই থেকে গিয়েছে কাগজে-কলমে। এবারও পর্যটনের মরশুমে সব থেকে বেশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পলিথিনজাত সামগ্রী। এখানে-ওখানে এখনও পড়ে থাকতে দেখা যায় জল ও ঠান্ডা পানীয়র বাতিল বোতল, ফেলে দেওয়া খাবার বা চিপ্সের প্যাকেট। থার্মোকলের থালা তো রয়েছেই। শুধু দৃষ্টিদূষণই নয়, পাহাড়-জঙ্গলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে এই জঞ্জাল। এবার এই প্রবণতা রুখতে একাধিক পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারের পাশাপাশি জায়গায় জায়গায় রাখা হয়েছে ডাস্টবিন। থার্মোকলের থালা ব্যবহার রুখতে সিয়ালি পাতা থেকে প্লেট প্রস্তুত ও সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে বন দপ্তর।
এতদিন সে ভাবে ঠান্ডার অনুভূতি না থাকলেও মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে জেলায় তাপমাত্রার পারদ নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। ঠান্ডা যত বাড়বে ততই পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে পুরুলিয়ায়। এতে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান বাড়লেও পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকজাত বর্জ্য থেকে ছড়ায় মারাত্মক দূষণ। স্থানীয়দের মতে, পর্যটকদের সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ। পুরুলিয়ার একটি স্থানীয় সংগঠনের সভাপতি তুষার অবস্তি জানান, গত পর্যটনের মরশুম পার হতেই অযোধ্যা পাহাড় এলাকার তিনটি জায়গা থেকে ৫৪ বস্তা বোতল এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করেন তাঁরা। আর এক সংস্থার তরফে পরমবীর পরমানিক জানান, অযোধ্যা সাফাই অভিযানে ১০০ বস্তারও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য উদ্ধার করেছিলেন তাঁরা।
জেলার পর্যটনস্থলগুলিকে পরিষ্কার রাখার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি (ট্যুরিজ়ম) এএম ওয়ালিউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত সমিতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য। জায়গায় জায়গায় ডাস্টবিন এবং ময়লা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাপক ভাবে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচার।’
অভিনব এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বন দপ্তরের পক্ষ থেকেও। বনকর্তাদের মতে, অনেক সময় নিরুপায় হয়েই পলিথিনজাত প্যাকেট, থার্মোকলের থালা ব্যবহার করেন পর্যটকরা। তাই এবার বনজ দ্রব্য থেকে এক বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও কার্তিকেয়ন এম বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘এলাকার বন কমিটিগুলির সদস্যদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। তাঁরা সিয়ালি পাতা থেকে প্লেট প্রস্তুত করছেন। যা বন দপ্তরের তরফ থেকে এলাকার হোটেলগুলিকে সরবরাহ করা হবে।’
পর্যটকদের কী বক্তব্য? ডিসেম্বরের শুরুতেই পুরুলিয়ায় ঘুরতে এসেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা স্বপন শীল। তিনি বলেন, ‘পাহাড়, অরণ্যকে ভালোবাসতে হবে। নিজের মনে করে এই প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করতে হবে। যদি কেউ নোংরা করেন সে ক্ষেত্রে সরাসরি বাধাও দেওয়া দরকার। সব কিছুই প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।’ পুরুলিয়া হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহিত লাটার মতে, এবছর প্লাস্টিকজাত বর্জ্য অনেকটাই কম হবে পাহাড়ে। সরকারি এবং বেসরকারি তরফে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য পর্যটকরা আগের থেকে অনেক বেশি সাবধান হয়েছেন। তাঁরাও চান পুরুলিয়ার প্রকৃতি যেন নির্মল থাকে।