Calcutta High Court : আইনজীবী মা খুন, বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আইনজীবী মেয়ে – lawyer daughter by profession approached calcutta high court seeking justice for lawyer mother


অমিত চক্রবর্তী
মা-র জন্য বিচার চেয়ে মেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে। মেয়ে পেশায় আইনজীবী, গায়ে উকিলের চিরপরিচিত গাউন। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের এই দৃশ্যে সিনেমার কাহিনি আর বাস্তব যেন মিলেমিশে একাকার। তবে ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে মেয়ে সুপর্ণা আইনজীবী হিসেবে জোরালো সওয়াল করে আদালতকে জানিয়েছিলেন, তাঁর মা দেবযানী আসলে নিজের স্বামীকে খুন করেননি- তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন এক দুশ্চরিত্র, লম্পট, অর্থলোভী পিশাচের অত্যাচার ও ব্ল্যাকমেল থেকে, যে তাঁকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিল।

দেবযানী যে প্রকৃত অর্থে খুনি নন, সেটা প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তাঁর আইনজীবী মেয়ে সুপর্ণার লড়াই। এ দিন বাস্তবে, হাইকোর্টে আইনজীবী পিয়ালী মাইতিও তাঁর মা কৃষ্ণা দাসমাইতির জন্য লড়লেন- তবে খুন হওয়া মা-র জন্য, মা-র খুনিরা যাতে শাস্তি পায়, সেই লক্ষ্যে। এবং সিনেমার সঙ্গে বাস্তবের আরও একটা পার্থক্য- মা নিজেও আইনজীবী ছিলেন। হাইকোর্টেরই আইনজীবী ছিলেন কৃষ্ণা দাসমাইতি।

বাস্তবের এই ঘটনা ডায়মন্ড হারবারের কুলপি থানা এলাকার। সেখানকার নিশ্চিন্দাপুরে বাসবেন্দ্র মাইতির পরিবারের দেবোত্তর সম্পত্তির মধ্যে ১৫৩ একর জমি এবং সেই সঙ্গে সোনার গয়না উধাও হওয়ার ঘটনা কিছু দিন আগে তাঁদের সামনে আসে। কারণ, পেশায় চিকিৎসক বাসবেন্দ্র দীর্ঘদিন কলকাতায় থাকতেন সরকারি চাকরির জন্য। অবসর নেওয়ার পর দেশের বাড়ি ফিরে গিয়ে তিনি ওই সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনা জানতে পারেন। সেই সম্পত্তি ফিরে পেতে নিম্ন আদালতে মামলা করেন তাঁর স্ত্রী, হাইকোর্টের আইনজীবী কৃষ্ণা দাসমাইতি।

অভিযোগ, গোটা অপরাধের পিছনে স্থানীয় কয়েক জন প্রভাবশালীর হাত ছিল এবং ডায়মন্ড হারবার এসিজেএম আদালতে মামলা দায়ের হতেই তারা মাঠে নামে। মামলা তুলে নিতে কৃষ্ণাকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হতে থাকে, এমনটা অভিযোগ। এই ব্যাপারে ওই মহিলা আইনজীবী গত ১২ অক্টোবর পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়, এমনটা অভিযোগ। ২৯ অক্টোবর ১০-১২ জন দুষ্কৃতী তাঁর বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়, কৃষ্ণাকে তারা বেধড়ক মারধর করে। জখম ওই মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহতের মেয়ে পিয়ালী মাইতি জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলায় পিয়ালীর অভিযোগ, পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অর্থাৎ অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। অথচ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বলছে, মাথায়-বুকে-পেটে আঘাত ও দেহে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে কৃষ্ণা দাসমাইতির মৃত্যু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা কেন রুজু করা হলো না?

পিয়ালী ও তাঁর সিনিয়ার আইনজীবী পৃথ্বীজয় দাস পুলিশের বিরুদ্ধে এবং ডায়মন্ড হারবার আদালতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। হাইকোর্টে পিয়ালী জানিয়েছেন, তাঁরা ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ দায়ের করার আবেদন জানালেও ডায়মন্ড হারবার আদালত তা খারিজ করে দেয়। পিয়ালীর আরও অভিযোগ, বিচারক তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার সময়ে এজলাসে বসে পক্ষপাতমূলক মন্তব্যও করেন। ডায়মন্ড হারবার আদালত থেকে মামলা সরানো ও কুলপি থানার বদলে অন্য কোনও এজেন্সিকে দিয়ে তদন্ত করানোর আবেদন হাইকোর্টে জানানো হয়েছে।

হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর নির্দেশ, পরবর্তী শুনানিতে ডায়মন্ড হারবারের এসিজেএমের ওই রায়ের কপি আদালতে পেশ করতে হবে, সুন্দরবন পুলিশ জেলার এসপি-কে তদন্তে নজরদারি করতে হবে, মামলাকারীকে নিরাপত্তা দেবে পুলিশ- প্রয়োজনে সশস্ত্র পুলিশি নিরাপত্তা- এবং কেস ডায়েরি ৩ জানুয়ারি হাইকোর্টে পেশ করতে হবে।

এ দিন শুনানি শেষের পর এজলাস থেকে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন পিয়ালী। তার পর তিনি কথা বললেন তাঁর সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে। একটু এগিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গেও কথা বলে নিলেন। পরবর্তী আইনি রণকৌশল তৈরি করতে প্রস্তুত হচ্ছেন পিয়ালী। মা-কে সুবিচার যে পাওয়াতেই হবে!

পিয়ালী, নাকি সুপর্ণা!



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *