রোজনামচার ব্যস্ত জীবনে গন্তব্যে যাওয়ার পথে চিত্ত বাঁশিওয়ালার সঙ্গে সুরেলা সফর উপভোগ করেন অনেকেই। উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ ব্লকের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ইটাল গ্রামের বাসিন্দা চিত্ত সিংহ। তাঁর আরও একটি পেশাগত পরিচয় রয়েছে। তিনি টোটো চালক। ষাটোর্ধ এই মানুষটি এলাকাবাসীর কাছে অত্যন্ত কাছের। কারণ তাঁর বাঁশির সুর।
মানুষের পছন্দ মতো ভিন্ন ভিন্ন সুর তোলেন তিনি। আর তা সকলেই উপভোগ করেন। শুরু বাঁশি নয়, সমান তালে দোতারাও বাজান তিনি। চিত্তবাবু জানান, তিনি রোজ ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ওঠেন এবং টোটো নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন। বাড়ি থেকে বাঁশি বাজাতে বাজাতে চলেন গন্তব্যে। আলো আঁধারি আকাশ, গ্রামের মেঠো পথ, সঙ্গে তাঁর বাঁশির সুরের মূর্ছনা- অনেকের কাছেই তা অনন্য অনুভূতি। তাঁর বাঁশির সুরেই ঘুম ভাঙে গ্রামের মানুষের।
চিত্তবাবু জানান, এভাবে টোটো চালানোর পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে বাজাতে তিনি বহু দূর গিয়েছিলেন। কখনও এই নিয়ে ঝুঁকি মনে হয়নি। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে বলে জানান চিত্তবাবু। তাঁর কথায়, ‘মনে এক রাশ কষ্ঠ জমে রয়েছে। আর কষ্ট লাঘব করতে বাঁশিই একমাত্র ভরসা।’ খানিকটা আক্ষেপের সুরেই বললেন, ‘বাঁশির জন্যই বেঁচে আছি, আমি একা। আমাকে ভগবান ছাড়া আর কে দেখবে?’
অপরদিকে চিত্তবাবুর বাঁশির সুর যেন বহু গ্রামবাসীর কাছে মনের মলম। তাঁর বাঁশি শুনে অনেকেই টোটোতে চাপেন। কেউ কেউ আবার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন তাঁর জন্য। চিত্তবাবুর দেখা পেলে গান না শুনে তাঁকে ছাড়তে চান না কেউ।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় দুই-আড়াই বছর ধরে তারা এই টোটোতে যাতায়াত করেন। শুধুমাত্র পা দিয়ে টোটো চালান এই প্রবীণ। তাও কোনওদিন ভয় পাননি তাঁরা। বরং টোটোয় এই অভিনব যাত্রা উপভোগ করেন তাঁরা। চিত্ত সিংহের এমন টোটো চালানো দেখে হতবাক অন্যান্য চালকরাও। তাঁরাও চিত্তবাবুর বাঁশির সুর শুনে বিভোর। বাঁশি দোতারায় সুর তুলে এভাবে আরও এগিয়ে যাক চিত্ত সিংহ, এমনটাই চাইছেন তাঁরা।