Calcutta High Court : সন্তান ‘মাইনর’ হলেই কাস্টডি মায়ের? বদলে যাচ্ছে ভাবনাচিন্তা – calcutta high court verdict on the custody of a minor child whether it is a girl or a boy know in details


অমিত চক্রবর্তী
সন্তানের কল্যাণই শেষ কথা। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ মেনে এক ১৩ বছরের বালক বাবা না মা, কার কাছে থাকতে চায়, তা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্প্রতি একটি মামলায় তার উপরেই ছেড়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কারণ তার সঙ্গে কথা বলে আদালত মনে করেছে, বয়সের হিসেবে আইনের চোখে ‘মাইনর’ হলেও সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান, বিবেচনাবোধও রয়েছে। আর আদালত সুযোগ দেওয়ার পরে সেই বালকও জানিয়ে দিয়েছে, সে তার বাবার কাছেই থাকতে চায়।

এই নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, একটি অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি তৈরি করে ওই বালককে তার বাবার থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় আদালত কোনও ভাবেই মদত দিতে পারে না। তা ছাড়া শুধুমাত্র মামলা করছেন বলেই ‘মাইনর’ সন্তানের কাস্টডি মা পাবেন, এমনও হতে পারে না।

মা এই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন। তবে আইনজীবীদের অধিকাংশই বলছেন, একটি ট্রেন্ডে বড়সড় পরিবর্তন আসছে। মেয়ে হোক বা ছেলে, নাবালক সন্তান মানেই কাস্টডি পাওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের একচ্ছত্র প্রাধান্য- এমন ধারণা বদলের সময় এসেছে। সুপ্রিম কোর্ট-সহ দেশের বিভিন্ন আদালতও কিন্তু এমন চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে শিশুর ইচ্ছা এবং তার কল্যাণের কথা মাথায় রেখে কাস্টডি মামলায় ব্যতিক্রমী রায় দিচ্ছে।

এমনই একটি মামলায় এক আইএএস অফিসারের দুই ‘মাইনর’ ছেলেকে একসঙ্গে রাখতে কাস্টডি বাবার হাতেই দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জম্মু-কাশ্মীরের নিম্ন আদালত, হাইকোর্ট ঘুরে সেই মামলা শীর্ষ আদালতে এলে দু’পক্ষের যুক্তি শুনে কোর্ট জানিয়ে দেয়, দু’পক্ষের বোনা যুক্তির জাল থেকে এটা স্পষ্ট, দুই নাবালক ভাইয়ের একসঙ্গে থাকাটা জরুরি। এক ছেলে বাবা ও অন্য জন মায়ের কাছে থাকলেও তারা খুশি নয়।

তা ছাড়া দিল্লিতে মায়ের কাছে থাকা নাবালকের মধ্যে বেশ কিছু মানসিক সমস্যাও দেখা গিয়েছিল। অন্যদিকে আইএএস অফিসার বাবা নিজে কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ফলে তিনি নাতিদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবেন বলে মনে করেছিল আদালত। কোর্ট এ-ও মনে করেছে, দাদু-ঠাকুমারা নাতি-নাতনিদের বেশি সময় দেন। এতে শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়, ওই নাবালকরা সমাজ, সংস্কৃতি, পারিবারিক ঐতিহ্য, মূল্যবোধ সম্পর্কেও শিক্ষা পাবে বলে মনে করেছিল আদালত।

এই আবহে উঠে আসছে ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া মৌসুমি মৈত্র গঙ্গোপাধ্যায় মামলার রায়ের প্রসঙ্গও। সে মামলায় ‘মাইনর’ সন্তানকে একই যুক্তিতে বাবার কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হাইকোর্ট। সেটাই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।

কলকাতা হাইকোর্টে সেই নাবালকের কাস্টডি সংক্রান্ত মামলার প্রসঙ্গে আদালতের বক্তব্য, অধিকারের দাবি ঘিরে দাম্পত্যে তৈরি তিক্ত আবহে কোনও সন্তানকে জেনেবুঝে ফেলে রাখতে পারে না কোর্ট। শুধু তা-ই নয়, এই ধরনের পরিস্থিতি কোর্টের কাছে না ক্ষমাযোগ্য, না কোর্ট এতে কোনওরকম উৎসাহ দেবে।

ডিভিশন বেঞ্চের আরও বক্তব্য, আইন, তথ্যপ্রমাণ সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম, আইনি প্রক্রিয়া বা আইনের পূর্বতন নজির- কোনও কিছুই কোনও আদালতের বাধ্যবাধকতা হতে পারে না। এই অবস্থায় প্রায় পাঁচ বছর মায়ের কাছে থাকলেও ওই নাবালককে বাবার কাছে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তবে সন্তানকে দেখার সুযোগও দেওয়া হয়েছে মাকে। মাসে দু’বার মা দেখা করতে পারবেন সন্তানের সঙ্গে। তা ছাড়া সপ্তাহান্তে ফোনে বা ভিডিয়ো কলে কথা বলার অধিকারও থাকছে মায়ের। থাকছে বছরে একবার সন্তানকে কাছে রাখার সুযোগও।

মালদার এক স্কুল শিক্ষিকা তাঁর নাবালক সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে যান। পরে স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। হয় ডিভোর্সের মামলাও। সন্তানের অধিকার পেতে হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় স্বামী অভিযোগ করেন, সন্তানকে দেখার সুযোগ দেন না স্ত্রী। যদিও স্ত্রীর দাবি, রোজগারের বিচারে স্বামীর পরিবারের পক্ষে সন্তানের ভরণপোষণ সম্ভব নয়।

তাই তিনি নিজের পরিবারে রাখতে চান সন্তানকে। হাইকোর্ট শেষ পর্যন্ত ওই নাবালকের সঙ্গে কথা বলে। বাবা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, কাকার কাছে থাকতে চায় বলে সে জানায়। তার যুক্তি, স্কুল থেকে ফেরার পরে মালদায় মায়ের কাছে একাকিত্ব অনুভব করে সে। তারপরেই আদালত নাবালকের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে বলে, মা ছাড়াও সন্তানকে বাবা-মা উভয়ের স্নেহ দিয়ে বাবা এবং তাঁর পরিবার বড় করছেন, সমাজে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে।

অতএব আইনজীবীরাও মোটামুটি একমত- ‘মাইনর’ মানেই ডিভোর্সের ক্ষেত্রে সন্তানের অধিকার একচ্ছত্র ভাবে মায়ের, এই ধারণার কোনও যৌক্তিকতাই আর নেই। এবং এটাই নতুন ট্রেন্ড। কলকাতা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রতীক ধর বলেন, ‘এ সব ক্ষেত্রে শিশুর কল্যাণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর একটি দিকও রয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক অভিভাবকত্বের যে সংজ্ঞা এত দিন ধরা হতো, তা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে।

আজ একজন মহিলা মা হিসেবে যা করতে পারেন, একজন পুরুষও বাবা হিসেবে সে সবের অনেক কিছু করতে পারেন। মায়ের অভাব তিনি মেটাতে পারেন, এমন ধারণা মজবুত হচ্ছে। আদালতও এই বিষয়টি মাথায় রাখছে। যে কাজ মা করতে পারেন তাঁর সন্তানের জন্য, সেটা বাবাও করতে পারেন, এমন ভাবনাচিন্তা আদালত কিন্তু মোটেই বাতিলের খাতায় ফেলে দিচ্ছে না।’

হাইকোর্টের আর এক বর্ষীয়ান আইনজীবী প্রবাল মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘পাঁচ বছর পর্যন্ত বাচ্চা সাধারণ ভাবে মায়ের কাছে থাকে। কিন্তু তারও ব্যাতিক্রম আছে। আর তার থেকে বড়দের ক্ষেত্রে বাচ্চার সঙ্গে বিচারকের কথা বলা খুবই জরুরি। কারণ তত দিনে বাচ্চার একটা বোধ তৈরি হয়। তার সঙ্গে কথা বলার পরে বিচারক বা বিচারপতি নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেন।’ অতএব, স্রেফ মা দাবি করছেন, তাই ‘মাইনরের’ কাস্টডি তাঁর, এমনটা কিন্তু আর কোর্ট চত্বরে ধরাবাঁধা নিয়ম নয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *