১৮৯৮ সালে এখানেই বেলুড় মঠের জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। হাওড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এখানেই নিত্য যাতায়াত ছিল সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের। হাওড়ার সেই ঐতিহ্যশালী রেজিস্ট্রি অফিসই এখন হয়ে উঠেছে বেআইনি পার্কিং জোন। স্বামীজির স্মৃতি জড়ানো সেই ভবনের সামনের অংশে একটা ফলক বসানো আছে ঠিকই। কিন্তু তা ঢেকে গেছে মুহুরিদের টাঙানো প্লাস্টিকে। কোথায় সেই ফলক রয়েছে তা বলে না দিলে কেউ খুঁজেও পাবে না।
হাওড়া কোর্ট চত্বরের একপাশেই রয়েছে একের পর এক হেরিটেজ ভবন। তার মধ্যে রয়েছে অন্যতম ওল্ড কালেক্টরেট ভবন ও ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রি অফিস। কিন্তু গোটা এলাকাটি জুড়ে একদিকে রয়েছে আইনজীবীদের অসংখ্য সেরেস্তা, দলিললেখক, স্ট্যাম্পপেপার ভেন্ডর, টাইপিস্ট, কম্পিউটার ডিটিপির দোকান, লস্যির দোকান, খাবার দোকান। হেরিটেজ ভবনগুলির গা ঘেঁষেও অনেক দোকান গজিয়ে উঠেছে দিনে দিনে। গত ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে তেমনই তিন-চারটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে হেরিটেজ ভবনগুলি।
রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে বসানো রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দের একটি মূর্তি। কিন্তু সেটি ফুটপাথের যেখানে বসানো হয়েছে তার দু’পাশ ঘেরা। ফলে পথচারীরা এই ফুটপাথ দিয়ে চলাফেরা করতে পারেন না। সামনে সার সার গাড়ি দাঁড়িয়ে। বাধ্য হয়েই এখানে ফুটপাথের বদলে রাস্তা ধরে যাতায়াত করতে হয়। রেজিস্ট্রি অফিস, হাওড়া আদালত, হাওড়া পুরসভা ও জেলা পরিষদে আসা লোকজনের ভিড় থাকে প্রতিদিনই। কোর্ট ও রেজিস্ট্রি অফিসেও নিত্য দিনের ভিড় যথেষ্ট। মঙ্গলাহাটের দিন আবার দশগুণ ভিড় হয়। ফলে ছোট ও মাঝারি দুর্ঘটনা এখানে লেগেই থাকে। উল্টো দিকেই হাওড়া জেলাশাসকের অফিস, কাছেই হাওড়া থানা ও পুলিশ কমিশনারের অফিস। এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন থাকা সত্ত্বেও এই জায়গার চরম অব্যবস্থা কারও চোখে পড়ে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।
সময়ের সঙ্গে এই জায়গার ব্যস্ততা বেড়েছে। ভিড় বেড়েছে। ভবনের সংস্কার হয়েছে, কাছাকাছির মধ্যে নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্যকে অবহেলা করেই যে সে সব করা হয়েছে তা ধরা পড়ে যায় খালি চোখেই। এই জায়গায় নতুন করে কিছু করা এই মুহূর্তে সম্ভব না হলেও, বঙ্কিম সেতু ও জিটি রোডের সংযোগস্থলে যেখানে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড গজিয়ে উঠেছে, হাওড়া ময়দান মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সেখানে কেন পার্কিং লট বানানো হলো না সেই প্রশ্নও উঠছে। এই এলাকার ছবি গত দশ বছরে পুরোপুরি বদলে গেলেও কোনও কিছুই যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে করা হয়নি তা স্পষ্ট।
এখনও মেট্রো রেল চালু হয়নি। এখনই সরকারি স্তরে উদ্যোগ শুরু হলে নিউ মার্কেটের মতো এখানেও মাটির নীচে পার্কিং লট তৈরি করে রাস্তা ও ফুটপাথ সাধারণের চলাচলের উপযোগী করা যায় বলে মনে করছেন অনেকেই। হাওড়া আদালতের সামনে হাওড়া পুরসভা অনুমোদিত যে পার্কিং জোন রয়েছে তার আয়তন কতটা তার সঠিক তথ্য নেই পুরসভার কাছেই। ফলে পার্কিং ফি নেওয়ার দায়িত্ব যে এজেন্সির কাছে, তারা যথেচ্ছ ভাবে ডাবল লাইন করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের অনুমতি দেয়। এর ফলেই যানজট এবং মাঝেমধ্যেই পার্কিংকে কেন্দ্র করে গন্ডগোল লাগে এখানে।
কয়েক বছর আগে ডাবল লাইনে পার্কিংকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের সঙ্গে গন্ডগোলে উত্তাল হয়ে উঠেছিল হাওড়া ময়দান এলাকা। র্যাফ নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘হাওড়া আদালতের সামনে পার্কিং ঠিক কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। যদি রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে পার্কিংয়ের অনুমতি না থাকে তাহলে সেখান থেকে পার্কিং তুলে দেওয়ারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’