কোর্স ফি মাত্র ১০০ টাকা, সময়ও লাগছে নেহাত কম! মেরে কেটে পাঁচ দিন। আর তাতেই ‘পেশাদার সাংবাদিক’ হওয়ার গ্যারান্টি! সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিজ্ঞাপন রীতিমতো চমকে দিয়েছিল সাংবাদিককূলকে। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিভাগের সঙ্গে যে সমস্ত অধ্যাপকরা যুক্ত, হতবাক হয়ে যান তাঁরাও! সত্যি কি পাঁচদিনে ‘পেশাদার সাংবাদিক’ তৈরি করছেন বিজ্ঞাপনদাতারা?
‘পুরোটাই চমক’, দাবি বিজ্ঞাপনদাতাদের
১০০ টাকায় সাংবাদিক তৈরির বিজ্ঞাপন দেখে যখন ভিরমি খাচ্ছেন বুম এবং কলম ধরা বহু সাংবাদিকরা সেই সময় এই বিজ্ঞাপনদাতাদের দাবি, সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য ক্লিকবেইট করে এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলতে রাজি হন বিজ্ঞাপনদাতা। ‘এই সময় ডিজিটাল’-কে তিনি বলেন, ‘এটি কোনও কোর্স নয়, একটি ওয়ার্কশপ মাত্র। আমরা একটি প্রতিষ্ঠান চালাই, যেখানে মূল কোর্স ডিজিটাল মার্কেটিং। বর্তমানে একাধিক সাইট তৈরি হয়েছে। ফলে সেখানে কাজ করতেও বহু মানুষ আগ্রহী। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি পাঁচ দিনের ওয়ার্কশপের আয়োজন আমরা করেছিলাম। এর জন্য তৈরি পোস্টার ঝলমলে করতে এই টোপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা এই বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের ফোন করেছেন তাঁদের আমরা ওয়ার্কশপের কথাই বলছি। পাঁচ দিনে পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করা যায় না। এই বিজ্ঞাপন ভাইরাল হওয়ার পরেই অনেকেই এই নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। ইতিমধ্যে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
তবে এই ‘ক্লিকবেইট’ বিজ্ঞাপনে বিস্তর লাভ হয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞাপনদাতার। তিনি বলেন, ‘নেগেটিভ পাবলিসিটিও কিন্তু একধরনের প্রচার।’
বিশিষ্টদের মতামত
এদিকে এই বিজ্ঞাপন দেখে হতবাক সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণজ্ঞাপন বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান তপতী বসু এই সময় ডিজিটাল-কে বলেন, ‘কোনওভাবেই পাঁচদিনে পেশাদার সাংবাদিক তৈরি সম্ভব নয় বলেই আমি মনে করি।’ পাশাপাশি এই সমস্ত বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পা দিয়ে বহু তরুণ-তরুণীরা পথভ্রষ্ট হতে পারেন বলেও মনে করছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে ‘এই সময়’ সংবাদপত্রের সম্পাদক হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই ধরনের প্রচার হাস্যকর। একইসঙ্গে এই বিজ্ঞাপন সাংবাদিকতার মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশার পক্ষে অবমাননাকর। পাশাপাশি, যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার স্বপ্ন দেখছেন, তাঁদের পক্ষেও তা চূড়ান্ত বিভ্রান্তিকর। একজন দক্ষ সাংবাদিক হতে গেলে যে অধ্যবসায়, তিতিক্ষা ও নিরলস পরিশ্রম জরুরি, সে সম্পর্কে তাঁদের মনে ন্যূনতম ধারণা তৈরি করার কোনও সম্ভাবনা এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। উলটে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তাঁদের সমূহ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সুতরাং সামাজিক প্রেক্ষিতেও এই বিজ্ঞাপন ভয়াবহ বার্তা বহন করছে। অবিলম্বে এই অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।’