লোকসভা ভোটের আগে আন্দোলনের ‘স্বাদ’ বদল করতে চাইছে বিজেপি। এতদিন তাদের আন্দোলন কর্মসূচি মূলত নিয়োগ দুর্নীতি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিজেপির নজর এ বার বাংলার প্রান্তিক কৃষকদের দিকেও। পদ্ম শিবির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী সোমবার থেকে কৃষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু করবে।
শনিবার সকালে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠক করে দলের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘বাংলায় কৃষকদের অবস্থা শোচনীয়। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না।’ এদিন একই ইস্যুতে বালুরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তিনিও রাজ্যের কৃষকদের দুরাবস্থার কথা বর্ণনা করে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রান্তিক কৃষকদের উপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় মিছিল এবং জনসভা করেন। এরপর শুভেন্দু যান হুগলির গোঘাট থানায়। সেখানে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘কৃষক সমাজকে অপমান করা অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে জল অনেকদূর গড়াবে।’ হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়েও কৃষক আন্দোলন শুরুর বার্তা দিয়ে বলেন, ‘রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে কাটমানি খাচ্ছে। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বড়সড় আন্দোলনের পরিকল্পনা করছি।’
২০১১-তে কৃষক আন্দোলনকে হাতিয়ার করে বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছিল। তার আগে ১৯৭৮-এ বামফ্রন্টের ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রেও কৃষক আন্দোলনের বড়সড় ভূমিকা ছিল বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কিন্তু বাংলার বর্তমান প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সেই অর্থে কৃষক আন্দোলনের কোনও ইতিহাস নেই। এমনকী, দলের কৃষক সংগঠনের হালও নড়বড়ে।
সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থাকা শুভেন্দু অধিকারী চাইছেন, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ইস্যুগুলির পাশাপাশি বঙ্গ-বিজেপি কৃষক আন্দোলনেও হাত পাকাক। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘কৃষক আন্দোলন বাংলার চিরাচরিত আন্দোলনগুলির আদি ফর্ম। সেটা প্র্যাক্টিস না করলে কোনও আন্দোলনেরই অর্থ থাকবে না।’
বাংলায় কৃষক আন্দোলনের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কৃষক আন্দোলনকে হাতিয়ার করে রাজ্যে পরিবর্তন এসেছিল। কিন্তু কৃষকদের দুর্দশা এখনও কাটেনি। কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের পার্টির কিষাণ মোর্চা সোমবার থেকে রাজ্যের সব বিডিও এবং এসপি অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করবে।’
বিজেপিকে কটাক্ষ করে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘বিজেপি যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভোটের আগে কৃষকদরদী সাজছে, সেটা কোনওদিনই সফল হবে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে সব কৃষক, এমনকী ভাগচাষীদেরও সরকার থেকে বিমা করে দেওয়া হয়েছে। চাষ করার জন্য সরকার থেকে উৎসাহভাতা দেওয়া হয় নিয়মিত।’