এ যেন বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা! প্রোমোটারদের বিরুদ্ধে ফ্ল্যাট বিক্রি নিয়ে প্রতারণার হাজার অভিযোগ ওঠে। এ বার এক প্রোমোটারের নির্মীয়মাণ বহুতলের ফ্ল্যাট কেনার টোপে আসল নথির ফটোকপি নিয়ে গিয়ে ফ্ল্যাট বেচে দেওয়ার অভিনব প্রতারণা সামনে এল শহরে। প্রথমে দু’টি ফ্ল্যাট এমন ভাবে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়টি সামনে আসার পর কসবা থানায় অভিযোগ জানান ওই প্রোমোটার। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, দু’টি নয়, ওই নির্মীয়মাণ আবাসনের অন্তত ১৪টি ফ্ল্যাট এই ভাবে জাল নথি তৈরি করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতির আর্থিক মূল্য অন্তত সাড়ে চার কোটি টাকা। এই চক্রে অন্তত তিনটি ব্যাঙ্কের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
কসবা থানা নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত ১৮ জনকে জালিয়াতি-চক্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে অবশ্য গত সপ্তাহে জামিনে মুক্তি দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালত। যদিও এর আগে ধৃতদের কয়েক জন হাইকোর্টে জামিনের জন্যে আবেদন করলেও পুলিশ এবং ওই প্রোমোটারের আইনজীবীরা অপরাধের গভীরতা ও গুরুত্ব তুলে ধরার পর জামিন-আর্জি নাকচ করেছিল হাইকোর্ট। ধৃতদের মধ্যে চার জনের ছবি ব্যবহার করে চারটি ফ্ল্যাট বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু প্রশ্ন, এমনটা হলো কী ভাবে? ওই প্রোমোটারের আইনজীবী অপলক বসু বলেন, ‘কসবায় গত বছর একটি পাঁচতলা আবাসন তৈরিতে হাত দেন আমার মক্কেল। নির্মাণ চলার মধ্যেই ফ্ল্যাট কেনার আগ্রহ দেখিয়ে তাঁর থেকে জমির অরিজিনাল ডিড, স্যাংশন প্ল্যান, জমির বর্তমান মালিকানার কাগজের ফটোকপি নিয়ে যান ফ্ল্যাট কিনতে ইচ্ছুকরা। যে কোনও লোকই ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে এই সব নথি নিয়ে গিয়ে সার্চিং-সহ আইনি দিক খতিয়ে দেখেন। এটাই দস্তুর। ফলে সন্দেহ করার কিছু ছিল না।’
কিন্তু এ বছর জানুয়ারিতে আচমকা একটি ব্যাঙ্ক থেকে নোটিস দিতে এলে খটকা লাগে প্রোমোটারের। ওই ব্যাঙ্ক থেকে ফ্ল্যাট কেনার জন্যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল। প্রথম মাস দু’য়েক ঋণের কিস্তি মেটানোও হয়। তার পরে নাকি আর টাকা জমা পড়ছিল না। তার পরেই ওই ফ্ল্যাট দু’টি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ব্যাঙ্কের লোক আসেন নোটিস নিয়ে। তার পরেই প্রোমোটার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সেই নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পেরেছে, এখনও পর্যন্ত ওই আবাসনের ১৪টি ফ্ল্যাট এই ভাবে প্রতারণা করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে যোধপুর পার্কের একটি ডেরার সন্ধানও পায় পুলিশ। সেখানে বসেই ষড়যন্ত্র ছকা হয়েছিল বলে ধৃতদের জেরায় জেনেছে পুলিশ। তদন্তে এখনও পর্যন্ত দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে জাল নথি দিয়ে ঋণ নেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। ফলে এ বার ব্যাঙ্কগুলির ভূমিকাও চলে এসেছে আতসকাচের নীচে।