তিনটে বিষয়ে খটকা লেগেছিল ফেলুদার। আফ্রিকার রাজা, আখতারির গান আর শশীবাবুর শিং। খটকা দূর করতে দরকার ছিল একটা ‘ব্রেনওয়েভের’। টিনটিনের ‘কানভাঙা মূর্তির’ প্রচ্ছদটাই যে শেষ পর্যন্ত ব্রেনওয়েভের কাজ করবে সেটা কে ভেবেছিল! তারপরই ফেলুদার প্রশ্ন, ‘তোপসে, আফ্রিকা বলতে তোর প্রথমেই কী মনে পড়ে রে?’ তোপসের মুখে ‘জঙ্গল’ শুনে পরের প্রশ্ন, ‘আর জঙ্গল বলতে?’ এবার তোপসের যে মনে হয়েছিল, সেটা একা তোপসে নয়, আপনার-আমার সবারই মনে হয় – ‘জানোয়ার’। এবার শেষ প্রশ্নটা ধেয়ে এল, ‘আর কিং অফ জানোয়ার বলতে?’
হ্যাঁ জানোয়ারদের কিং বলে মান্যতা পাওয়া আফ্রিকান সিংহকে টিভির বাইরে একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে কলকাতায় বসেই। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে অনেক দূর এগিয়েছেন। সরকারি নিয়ম-কানুনের সমস্যা মিটলে নতুন বছরেরই যে কোনও সময়ে আলিপুরে শোনা যাবে আসল পশুরাজের সিংহগর্জন। তবে রহস্যে মোড়া কৃষ্ণমহাদেশ আফ্রিকা থেকে শুধু সিংহই নয়, আরও একটি দুর্লভ প্রজাতি আসতে চলেছে কলকাতায়। সেটি পেঙ্গুইন। দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল অঞ্চলে বসবাস করে পেঙ্গুইনের একটি বিশেষ প্রজাতি (স্ফেনিসকাস ডেমারসুস)। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ার্ভেশন অফ নেচারের অনুযায়ী পেঙ্গুইনের এই বিশেষ প্রজাতিকে এখন ‘বিপন্ন’ তালিকায় রাখা হয়েছে।
দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে এবং চিড়িয়াখানার সম্পদ বাড়াতে কয়েক বছর অন্তর অন্তর বিভিন্ন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষই নতুন প্রজাতির জন্তু বা পাখি আনার ব্যবস্থা করে। আলিপুরও এর ব্যতিক্রম নয়। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলছেন, ‘আফ্রিক্যান লায়ন এবং কেপ পেঙ্গুইন আনার কথাবার্তা চলছে। তাড়াতাড়িই ওরা এসে পড়বে – এই বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’ তবে খাস আফ্রিকার একেবারে দুই ভিন্ন এলাকার এই দুই বাসিন্দাতেই আলিপুর চিড়িয়াখানার চমক শেষ হবে এমন নয়। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা বলছেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি আরও তিন প্রজাতির প্রাণী নিয়ে আসার। এদের আনা হবে দেশেরই বিভিন্ন চিড়িয়াখানা থেকে। সুতরাং এরা হয়তো আগেই চলে আসবে।’ কোন তিন ধরনের প্রাণীর কথা বলছেন উনি?
অধিকর্তা জানাচ্ছেন, এই তালিকায় রয়েছে নেকড়ে, ভারতীয় বন্য কুকুর বা ঢোল এবং হরিণের সবচেয়ে ছোট প্রজাতি মাউজ় ডিয়ার। এই তিন প্রজাতির মধ্যে মাউজ় ডিয়ার দর্শকদের বিশেষ আগ্রহের কারণ হতে যাচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করছেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। এই প্রজাতির পূর্ণবয়স্ক একটি হরিণের শরীরের দৈর্ঘ্য দু’ফুটেরও কম এবং ওজন মাত্র তিন কেজি হয়। মধ্য ভারত ও দক্ষিণ ভারতের জঙ্গলে এই প্রজাতির হরিণের দেখা মেলে।