CV Ananda Bose : কেস চালাতে খরচ দেবে ইউনিভার্সিটি, উপাচার্য নিয়োগ মামলায় নির্দেশিকা আচার্য-বোসের – the state universities have to bear the cost of fighting the case in case of appointment of vice chancellor


এই সময়: উপাচার্য নিয়োগ মামলায় আচার্য-রাজ্যপালের মামলা লড়ার খরচ জোগাতে হবে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে! রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রাজভবনের পাঠানো এই সংক্রান্ত নির্দেশিকায় যুগপৎ বিস্মিত ও বিরক্ত রাজ্য সরকার। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই এক তরফা অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করছেন আচার্য-রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস-এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার। সেই মামলার একাধিক শুনানিতে শীর্ষ আদালত বারবারই আচার্য-রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে বৈঠকে বসার পরামর্শ দিয়েছে। এই মামলারই খরচ জোগাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাজভবনের তরফে।

সূত্রের খবর, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে। সেখান থেকে তহবিল যাবে রাজভবনের কাছে। ইতিমধ্যে যাদবপুর-সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের ফান্ড থেকে ৬০ হাজার টাকা করে পাঠাতে শুরু করেছেন। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় টাকার অভাবে তহবিলে কিছু পাঠাতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে রাজভবনকে। রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন এবং প্রাক্তন উপাচার্যদের মঞ্চ ‘এডুকেশনিস্ট ফোরাম’-এর বক্তব্য, আচার্য-রাজ্যপাল বোসের এই পদক্ষেপ নজিরবিহীন। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রবিবার স্পষ্ট বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা দপ্তর বিষয়টি অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনবে।’

গত সপ্তাহেই আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এই বৈঠক ভালোই হয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম চূড়ান্ত করতেই একসঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তারমধ্যেই রাজভবনের নতুন নির্দেশিকা সামনে আসতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত আচার্য-নিযুক্ত ভিসিদের উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বলা হয়েছে, এই ভারপ্রাপ্ত ভিসিরা শুধু দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাবেন। কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। অস্থায়ী ভিসিদের বিশেষ ভাতা, সুযোগ-সুবিধেও না-দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলায় রাজ্যের সঙ্গে লড়াই চলছে আচার্য-রাজ্যপালের। তাঁর নিযুক্ত ভিসিদেরই রাজভবন থেকে মামলার জন্য টাকা জমা করার নির্দেশ জারি হওয়ায় রাজ্যপালকে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে এডুকেশনিস্ট ফোরাম।

সংগঠনের তরফে প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর এমন নির্দেশ সম্পূর্ণ বেআইনি। তাছাড়া ভিসিরা এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কীভাবে? কারণ ওঁরা কোনও নীতিগত সিদ্ধান্তই নিতে পারেন না। এ ভাবে রাজ্য সরকারের পাঠানো তহবিলকেই অনৈতিক ভাবে রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত ভিসিরা ইসি বা সিন্ডিকেটের মতো নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠক ছাড়া এককভাবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ব্রাত্যর ব্যাখ্যা, ‘রাজ্যপাল মাছের তেলেই মাছ ভাজার চেষ্টা করছেন।’

যদিও কেন্দ্রীয়ভাবে এই তহবিল তৈরির দায়িত্বে থাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি শান্তা দত্ত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় রয়েছেন আচার্য। তিনি বিপদে পড়লে বা তাঁকে আক্রমণ করা হলে তাঁকে প্রোটেকশন আমাদের অবশ্যই দিতে হবে।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ ফিনান্স বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে এই খাতে ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে। তাতে সায় দিয়েছেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুও। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে শিক্ষক সংগঠন জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, ‘প্রায় সমস্ত ফান্ড বন্ধ করে দিয়ে, খরচের উপর ৪০ শতাংশ এমবার্গো চাপিয়ে রাখা হয়েছে।

টাকার অভাবে ব্যাহত হচ্ছে গবেষণা, পঠনপাঠন। এই পরিস্থিতিতে ভিসি-রেজিস্ট্রার কোনও রকম আলোচনা না করেই এই টাকা খরচ করার কথা বলেছেন। যা আর্থিক দুর্নীতির সামিল।’ বিষয়টি ‘বেআইনি’ বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি মনোজিৎ মণ্ডলেরও। বুদ্ধদেবের বক্তব্য, ‘৬০ হাজার টাকা যদি দিয়েও থাকি, তা নিয়ে এত কথা বলার কী আছে! বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক মামলা হয়। সেই ফালতু মামলা লড়তে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচও হচ্ছে। কই, তখন তো কেউ কিছু বলছেন না!’

প্রেসিডেন্সি ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘রাজ্যপাল হিসেবে নয়, উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে এই নির্দেশিকা দিয়েছেন। তাতে আপত্তির কিছু দেখি না। কারণ মোকদ্দমা ফ্রিতে লড়া যায় না। সেই টাকা হয় রাজ্য সরকারকে দিতে হবে, না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। রাজ্য যদি আচার্যকে সুপ্রিম কোর্টে পার্টি না করত, তাহলে এই অর্থেরও প্রয়োজন পড়ত না।’ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ফিনান্স কমিটিকে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন শুভ্রকমল।

সংস্কৃত ও বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি রাজকুমার কোঠারির বক্তব্য, ‘সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে কোনও টাকা নেই। ফলে সেখান থেকে কোনও টাকা আমরা দিতে পারছি না। বারাসতকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি।’ এসবের মধ্যেই আজ, সোমবার কেন্দ্রের ‘বিকশিত ভারত’ প্রকল্পের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২৫ জনের দল নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে রাজভবনে রিপোর্ট করতে। এনিয়েও নতুন করে বিতর্ক তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *