কেবল জ্বলজ্বল করছে দু’টি চোখ। অনেকেরই বাড়ির পোষা মুরগি উধাও হয়ে যাওয়ার পরে সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে। বন দপ্তর অবশ্য মনে করছে, এতটা আতঙ্কের কিছু নেই। অঢেল খাবারের জোগান থাকলে চিতাবাঘ সচরাচর মানুষের উপরে হামলা করে না। ডাউহিলে সেটা যথেষ্ট পরিমাণেই রয়েছে। কিন্তু সে কথা শুনছে কে? ডাউহিলের এক হোম স্টের মালিক অর্জুন রাই বলেছেন, ‘হোম-স্টেতে রাত কাটাতে আসা পর্যটকদের রাতে বার হতে নিষেধ করে দিয়েছি।’ কার্শিয়াং শহরের বাসিন্দা সাওন লিম্বু বলেছেন, ‘ডাউহিলই আমার ব্যবসার এলাকা। কালো চিতাবাঘের কথা শোনার পরে সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই শহরে ফিরে আসছি।’
ডাউহিল এলাকা বন দপ্তরের ভাষায় টেরিটোরিয়াল এরিয়া। মানে বন দপ্তর ঘোষিত কোনও সংরক্ষিত অরণ্য নয়। কিন্তু পাহাড়ে অরণ্যের বিস্তার ভালো করে খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, ডাউহিল আসলে সিঞ্চল অভয়ারণ্যের এক্সটেনশন। ফলে সারা বছরই এই এলাকায় বুনো মুরগি, শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। কখনও সখনও চিতাবাঘও দেখা যায়। কিন্তু চিতাবাঘের রং কালো হওয়াতেই যত সমস্যা। লোকজন যেন ভয়ে মরে যাচ্ছে। সন্ধ্যার পরে অনেকেই ঘরের বাইরে বার হচ্ছেন না। দিনের বেলাতেও বাচ্চাদের ঘরের বাইরে পাঠিয়ে চোখে চোখে রাখছেন। কাজ সেরে যাঁদের ফিরতে রাত হচ্ছে, তাঁরাও খুব সাবধানে নির্জন এলাকা পার হচ্ছেন। হেঁটে বাড়ি ফেরার সময়ে সঙ্গী খুঁজছেন।
সবচেয়ে ভয়ে আছেন হোটেল এবং হোম-স্টে মালিকেরা। ডাউহিল জুড়ে নামী হোটেল থেকে হোম-স্টের ছড়াছড়ি। রয়েছে দু’টি সরকারি স্কুল এবং হস্টেল। দার্জিলিংয়ে এড়িয়ে যাঁরা নির্জন পাহাড়ে সময় কাটাতে যান তাঁরা প্রায় সারা বছরই ডাউহিলে বেড়াতে আসেন। অনেকেই রাতের আকাশ দেখতে রাস্তায় বার হয়ে পড়েন। হোটেল এবং হোম-স্টের মালিকেরাও তাই পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলছেন। কার্শিয়াংয়ের ডিএফও হরিকৃষ্ণ পি জে বলেন, ‘কালো চিতাবাঘটি কেবল ডাউহিলই নয়, বাগোরা এলাকাতেও ঘোরাফেরা করছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই।’