স্বাভাবিক ভাবেই সময়ের ঢের আগে জন্মানো দুই ‘প্রি-টার্ম’ সদ্যোজাতের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তখনও অপরিণত। শ্বাসপ্রশ্বাস কিংবা খাওয়াদাওয়া-সবই চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয় চিকিৎসকদের। কিন্তু অসাধ্যসাধন হয়েছে অবশেষে। তিন মাসের চেষ্টায় তাদের স্বাভাবিক জীবনে পৌঁছে দিল মেডিকা সুপার-স্পেশালিটি হাসপাতালের নিওন্যাটাল ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু) টিম। সদ্য শিশু দু’টিকে ছুটি দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল থেকে। ডিসচার্জের সময়ে এক জনের ওজন ৮০৪ গ্রাম থেকে বেড়ে হয়েছে দেড় কেজির কিছু বেশি আর অন্য জনের ৬৩০ গ্রাম থেকে বেড়ে দু’কেজি ছুঁইছুঁই।
এর আগে অবশ্য এর চেয়েও কম ওজনের সদ্যোজাতকে জীবনের উষ্ণতায় ফেরাতে পেরেছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। ৫৫০ গ্রাম, এমনকী ৪৫০ গ্রাম ওজন নিয়ে জন্মানো নবজাতককেও ছ’মাসের চেষ্টায় সুস্থ-সবল করে তোলা সম্ভব হয়েছে। গর্ভাবস্থার ২৩ সপ্তাহে জন্মানো ৪৫০ গ্রামের সদ্যোজাতকে বাঁচানোটাই এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা নজির। ২০২০-র মার্চে সে কাজ করেছিলেন এসএসকেএমের সদ্যোজাত রোগ-বিশেষজ্ঞ শ্যামল সর্দার। তাঁর মতো চিকিৎসকেরা মনে করেন, এত চুলচেরা বিচার না করাই ভালো। কেননা, ১০০০ গ্রামের কম ওজনের সদ্যোজাতকে বাঁচানোটা সব সময়েই চ্যালেঞ্জ চিকিৎসকদের কাছে।
সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে সফল ভাবে উতরে গিয়েছেন মেডিকার শিশু ও সদ্যোজাত রোগ বিভাগের প্রধান নিকোলা জুডিথ ফ্লিন এবং তাঁর টিম। সেই দলে ছিলেন অরূপরতন মণ্ডল, অভিজিৎ দাস, মাহফুজ মল্লিক, অঙ্কিত চৌরাসিয়া, সালাউদ্দিন, পারমিতা পাল ও রাম কুমারের মতো চিকিৎসকদের পাশাপাশি নূপুর দাস ও লাভলি সজনদের মতো নার্স এবং তাঁদের টিম। নিকোলা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন ধরে মেকানিকাল ভেন্টিলেশনের সঙ্গে খুলির মধ্যে রক্তপাতের জেরে ওই দুই সদ্যোজাতকে বাঁচানোটা গোড়ায় কঠিন ও জটিল হয়ে উঠেছিল। একটু স্থিতিশীল হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে পুষ্টির বিষয়টি। তাই আমাদের লক্ষ্য ছিল স্তন্যপান করানো, ক্যাঙ্গারু মাদার-কেয়ারের প্রয়োগ, ভালোবাসায় মায়ের বুকে আগলে রাখার মতো অতি-জরুরি বিষয়গুলি। তাতেই এসেছে সাফল্য।’