অমৃত ভারত প্রকল্পে বিমানবন্দরের ধাঁচে গড়ে তোলা হবে দেশের বেশ কয়েকটি স্টেশন। তার মধ্যে নাম রয়েছে বর্ধমানেরও। কিন্তু, এদিনের দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু ও ৩৪ জন রেলযাত্রী আহত হওয়ায় অনেকেরই বক্তব্য, আগে গোড়ার গলদ মেরামত করুক রেল। তার পর ঝাঁ চকচকে করা হোক স্টেশন।
বর্ধমান স্টেশনে এদিনের দুর্ঘটনা উসকে দিয়েছে ২০২০-র ৪ জানুয়ারি রাতের ভয়াবহ স্মৃতি। হেরিটেজ এই স্টেশন ভবনের সামনের কাঠামো ভেঙে সেদিন মারা যান একজন। সেই দুর্ঘটনার পরও গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু, এত দিনেও সেই কমিটির রিপোর্ট কেন জনসমক্ষে আসেনি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ১৮৫৫ সালে নির্মিত ১৬৮ বছরের পুরোনো বর্ধমান স্টেশন ভবনের মেরামতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন প্রশাসনের আধিকারিক থেকে সাধারণ মানুষ। এমনকী কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ তদন্তে আসা রেলের আধিকারিকরাও।
এবারও জলাধার ভেঙে বিপর্যয়ের পর মেরামতি আর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠল। জানা গিয়েছে, স্টেশনে বহু কিছুই বিকল। সদ্য বসানো সিসি ক্যামেরার অনেকগুলো কাজ করে না। মেন গেটের সামনে লোকদেখানো নামমাত্র একটি লাগেজ স্ক্যানার রয়েছে, যদিও বাকি সব পথে নেই কোনও নজরদারি। ফলে উঠেছে নিরাপত্তার প্রশ্নও। এদিন ঘটনাস্থলে এসে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘আমার আপনার সকলের বাড়িতেই জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে। কোনও ভাবে যদি সেটা ভেঙে পড়ে তাহলে কি সেখানেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব বলা যাবে? অবশ্যই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার তদন্ত করবে রেল। কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এই দুর্ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘মৃতদের একজন মফিজা বিবি বর্ধমান পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের লাকুর্ডি কাতরাপোতার বাসিন্দা। আসানসোল যাবেন বলে তিনি টিকিট কেটেছিলেন। রেলের গাফিলতির জন্যই আজ তিনি মারা গেলেন। আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অনেকে।’ গাফিলতির প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁর কথায়। বলেন, ‘উন্নয়নের নামে শুধু চকচকে করা ছাড়া কোনও কাজই রেল করছে না। এদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ দিল।
এই গরিব মানুষদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও মৃতদের পরিবারের লোকেদের রেলে চাকরির দাবি জানাচ্ছি আমরা।’ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এদিন দলীয় কর্মীদের নিয়ে স্টেশনে চলে আসেন বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা। বিধায়কের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘চকচকে উন্নয়নের কথা কারা বলে সেটা রাজ্যের মানুষ জানেন। স্টেশনের এই দুর্ঘটনা সত্যিই দুর্ভগ্যজনক। বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ লোকসভায় ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিনি নিহত ও আহতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছেন।
আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া নিয়েও আমাদের কথা হয়েছে।’ এদিনের ঘটনায় সরব সিপিএমও। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘তিন বছর আগে এই স্টেশনেরই প্রবেশপথের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। এক জন মারা গিয়েছিলেন। আজ জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ায় প্রমাণিত রেল ও কেন্দ্রীয় সরকার রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে কতটা উদাসীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। শুধু চাকচিক্য, বিজ্ঞাপন দিয়ে সব কিছু চাপা দিতে চায়। বন্দে ভারতের ঢক্বানিনাদ ছাড়া আর কিছু নেই।’