Hooghly District : রূপকথার মতোই ফিরলেন বৃদ্ধ – hooghly old man find his home from social media post by some youths


১৩ ডিসেম্বর রাত দশটা। শ্রীরামপুরের গঙ্গার ঘাটে এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে ঠান্ডায় কাঁপছেন। (সেটা বাইকে যেতে যেতে চোখে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা শুভঙ্কর দাসের। তিনি তখন বাইকে স্ত্রী সেঁজুতিকে নিয়ে ফিরছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই বাইক দাঁড় করিয়ে ওঁর কাছে যান। নিজের পরনের টি-শার্ট তাঁকে খুলে পরিয়ে দেন। কিন্তু কে তিনি? কেনই বা এত রাতে গঙ্গার ঘাটে নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে? কিছুই বলতে পারেননি বছর ৭০-এর সুবল দাস (নাম অনেক পরে জানা গেছে)। শুধু বলেন, ‘আমি কী করে এখানে এলাম, জানি না। নামও মনে পড়ছে না।’ শুভঙ্কর বুঝতে পারেন ওই বৃদ্ধের কিছুই মনে নেই। তিনি চট করে বাড়ি থেকে গরম জামা, চাদর, কম্বল, খাবার নিয়ে আসেন। সে দিন রাতের মতো তাঁর একটা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে স্বামী-স্ত্রী বাড়ি ফেরেন রাত একটা নাগাদ। এর মধ্যে শ্রীরামপুর থানাতেও জানান শুভঙ্কর।

কিন্তু ভদ্রলোকের পরিচয় কী? কোথায় থাকেন? শুভঙ্কর ‘এই সময়’কে বললেন, ‘আমরা যখন রাতে ওঁকে খাবার দিচ্ছিলাম, উনি শুধু বলছিলেন – বাড়িতে আমার স্ত্রী এটা রান্না করেন! এর বাইরে আর কিছু না।’

ইতিমধ্যে শুভঙ্কর শুভদীপ মুখোপাধ্যায় বলে এক আইটি কর্মীকে পুরোটা জানান। সঙ্গে ছবিও দেন ওই ভদ্রলোকের – সোশ্যাল মিডিয়া-সহ পরিচিত মহলে সার্কুলেট করলে যদি তাঁর পরিবারের খোঁজ মেলে। পাশাপাশি যদি কোনও ওল্ড এজ হোমে ওঁকে রাখার ব্যবস্থা করা যায়। কিশোর বয়স থেকেই শুভদীপের নেশা সমাজসেবা। তিনি কয়েক বছর আগে ‘মহাজীবন’ নামে একটি এনজিও গঠন করলেও পুরোটাই ওই এনজিও-র সদস্যদের প্রত্যেক মাসের অনুদানে চলে। সেই সমাজসেবার সূত্রেই শুভঙ্করের পরিচয় শুভদীপের।

শুভদীপ বললেন, ‘শুভঙ্করের থেকে মেসেজ পেয়ে আমি ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে পোস্ট করি। তা ৫-৬ জন শেয়ার করেন। তা চোখে পড়ে ভদ্রলোকের মেয়ের পরিচিতের এক পরিচিতের। সে ভাবেই আমরা সন্ধান পাই ওঁর মেয়ের।’ সুবলবাবুর মেয়ে সুদীপা দাস বললেন, ‘বাবা ভুলে যান মাঝেমধ্যেই। আমরা সবাই কল্যাণীতে একটা বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়ি তাহেরপুর। বাবা ওই বিয়েবাড়ি থেকেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন।’ তিনি জানালেন মিসিং ডায়েরি করা হয় সোমবারই। তাঁরা নিজেরাও খুঁজতে থাকেন। পান রানাঘাট লায়ন্স ক্লাবের সাহায্যও। কিন্তু… ।

মিরাক্ল তার পরেই। সুদীপার পরিচিত এক জন হোয়্যাটসঅ্যাপে সুবলবাবুর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে স্টেটাস দেন। সেটা দেখে বর্তমানে লন্ডনে থাকা কাঁচরাপাড়ার রচয়িতা পোদ্দার সুদীপাকে ফোন করে বলেন যে তিনি এ রকমই আরেকটা পোস্ট ফেসবুকে দেখেছেন। দু’জনকে একই লোক মনে হচ্ছে। রচয়িতা বৃদ্ধের মেয়েকে শুভদীপের নম্বর দেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সুদীপা। তাঁর কথায়, ‘এর পরে উনি আমায় বাবার ছবি পাঠান। আমি যখন জানাই যে এই মানুষটাকেই আমরা গত চার দিন ধরে পাগলের মতো খুঁজছি, তখন উনি বলেন যে বাবা শ্রীরামপুরে রয়েছেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে রওনা হই।’

এই সবের মধ্যে অবশ্য সুবলবাবু আবার নিখোঁজ! তিনি যেখানে ছিলেন সেখানে গিয়ে শুভঙ্কর আর তাঁকে দেখতে পাননি। তাই তিনি সুদীপাকে ফোনেই বলেন, ‘আপনি আসুন। আমরা সবাই একসঙ্গে খুঁজব।’ তবে সেটার প্রয়োজন হয়নি, তার আগেই পুলিশ জানায় ওই ভদ্রলোককে শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সুবলবাবুর স্ত্রী, কন্যা-সহ আত্মীয়রা সেখানে পৌঁছন। সুদীপার কথায়, ‘আমাকে দেখেই বাবা বলে ওঠেন, ওই তো আমার ছোট মেয়ে এসেছে। সবই মনে পড়ে। আমি ভাবতে পারিনি এ ভাবে বাবাকে ফিরে পাব।’ শুভঙ্কর এই পুরো ঘটনার সাক্ষী। তাঁর কথায়, ‘আমি চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন। অতীত-বর্তমান ওঁর এখন আবার সবটাই মনে রয়েছে।’ সুবল দাসকে যে ভাবে খুঁজে পাওয়া গেছে, তা যে প্রমাণ করে ভালো মানুষের অভাব নেই – তাই-ই মনে করছেন তাঁর আত্মীয়রা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *