ছ’দিন আগে প্রসব যন্ত্রণা তীব্র হলে রোহিত ও তার মা তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে। সেই থেকেই গত ছ’দিন ধরে এক কাপড়েই হাসপাতালে পড়ে আছে দু’জনে। সদ্যোজাতের কাছে পড়ে আছেন তুহিনা বিবি। প্রচণ্ড ঠান্ডায় একটা চাদর জোগাড় করে হাসপাতালের ওয়ার্ডের বাইরে পড়ে আছে রোহিত। দিনে একবার কাকির সঙ্গে দেখা করে সে।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে রোহিতের হাতে ২২ হাজার টাকা তুলে দিয়ে ওই মহিলা বলেছিলেন, ‘যা দরকার লাগবে খরচ করবি।’ সেই টাকা থেকেই ওষুধ কেনা, খাওয়ার জন্য খরচ করছে রোহিত। সঙ্গে পকেটে থাকা কাগজে লিখে রাখছে হিসাবও। রোহিতের কথায়, ‘ছেলে হওয়ার খবর কাকির বাড়ির সবাইকে ফোন করে বলেছি। কেউ আসেনি। কাকি ভালো হয়ে কবে বাড়ি ফিরবে সেই অপেক্ষায় আছি।’ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘ওই মহিলা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মা হয়েছেন। সন্তানের জন্ম দেওয়ার বয়সের শেষপ্রান্তে এসে স্বামীর শুক্রাণু ধারণ করে সন্তানের জন্ম দেওয়ার যে ঝুঁকি নিয়েছেন সেটাকে স্যালুট জানাতেই হয়। আমরা খুশি, কারণ এই মুহূর্তে মা ও বাচ্চা দু’জনেই ভালো রয়েছে।’
মুরারই এর বাসিন্দা ওই দম্পতির আয় বলতে বাড়িতে থাকা একটি মুদির দোকান। কিন্তু তাদের কোনও সন্তান ছিল না। স্বামী-স্ত্রী কলকাতা ডাক্তার দেখিয়ে দীর্ঘদিন আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানলাভের চেষ্টা করেন। দু’বছর আগে কলকাতার একটি পরীক্ষাগারে স্বামীর শুক্রাণু সংরক্ষণ করা হয়। একবার চেষ্টা করেও সফল হননি। এর মধ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। কোভিডে স্বামী মারা যান। সন্তান কামনায় মৃত স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন মহিলা। ওই মহিলার আইনজীবী অনিন্দ্যকান্তি সিনহা বলেন, ‘স্বামী বেঁচে থাকার সময়ে তাঁর সন্তান প্রসবের শারীরিক অসুবিধা ছিল। পরবর্তীতে সেই সমস্যা মিটে গেলেও মৃত্যু হয় স্বামীর। সেই কারণেই এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা। এটা একটা চরম লড়াই।’