IVF Sperm Donor : পালন করা সন্তানই এখন অনাথের নাথ – adopted child is taking care of the mother who given birth using dead husband sperm at rampurhat medical college


এই সময়, রামপুরহাট: স্বামীর মৃত্যুর পরে মহিলার সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বীরভূমের মুরারইয়ের বছর ৪৮-এর মহিলার মা হওয়ার সিদ্ধান্তে বাপের বাড়ির লোকজন এমনকী আত্মীয়রাও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত মঙ্গলবার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন সেই মহিলা। সন্তান সুস্থ থাকলেও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। আত্মীয়-পরিজন সবাই যখন তাঁকে ব্রাত্য করেছে তখন অনাথের নাথ হয়ে সাত দিন ধরে এক কাপড়ে হাসপাতালে পড়ে রয়েছে রোহিত শেখ ও তার মা তুহিনা বিবি। মুরারই থেকে ২ কিলোমিটার দূরে তাদের বাড়ি। বাবা রাজেশ শেখ মেদিনীপুরে হকারি করেন। তিন ভাইবোনের সংসারে রোহিত বড়। ওর যখন সাত বছর বয়স তখন থেকেই ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী তাকে বাড়িতে রেখে মুদিখানার দোকানে কাজ শেখান। চার বেলা খাওয়া দাওয়া, জামাকাপড় সবই দিতেন তাঁরা। ওই মহিলাকে কাকি বলে ডাকে রোহিত। আজ রোহিতের বয়স ১৬ বছর। গত ৯ বছর ধরে কাকি তাকে বড় করেছে। স্বামীর মৃত্যুর পরে আরও আপনার হয়ে উঠেছে সে। কাকিমার সন্তান ধারণের খবর পেয়ে যখন পরিবারের লোকজন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখন রোহিত সেই কথা বাড়ি গিয়ে মাকে বলে। সেই থেকে সন্তান সম্ভবাকে দেখভাল করে রোহিত ও তার মা তুহিনা বিবি। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে বড় করেছেন ওই মহিলা। আমার কর্তব্য তাঁকে দেখা। তাঁর পাশে কেউ নেই তো কী হয়েছে আমরা তো আছি।’

ছ’দিন আগে প্রসব যন্ত্রণা তীব্র হলে রোহিত ও তার মা তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করে। সেই থেকেই গত ছ’দিন ধরে এক কাপড়েই হাসপাতালে পড়ে আছে দু’জনে। সদ্যোজাতের কাছে পড়ে আছেন তুহিনা বিবি। প্রচণ্ড ঠান্ডায় একটা চাদর জোগাড় করে হাসপাতালের ওয়ার্ডের বাইরে পড়ে আছে রোহিত। দিনে একবার কাকির সঙ্গে দেখা করে সে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে রোহিতের হাতে ২২ হাজার টাকা তুলে দিয়ে ওই মহিলা বলেছিলেন, ‘যা দরকার লাগবে খরচ করবি।’ সেই টাকা থেকেই ওষুধ কেনা, খাওয়ার জন্য খরচ করছে রোহিত। সঙ্গে পকেটে থাকা কাগজে লিখে রাখছে হিসাবও। রোহিতের কথায়, ‘ছেলে হওয়ার খবর কাকির বাড়ির সবাইকে ফোন করে বলেছি। কেউ আসেনি। কাকি ভালো হয়ে কবে বাড়ি ফিরবে সেই অপেক্ষায় আছি।’ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘ওই মহিলা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মা হয়েছেন। সন্তানের জন্ম দেওয়ার বয়সের শেষপ্রান্তে এসে স্বামীর শুক্রাণু ধারণ করে সন্তানের জন্ম দেওয়ার যে ঝুঁকি নিয়েছেন সেটাকে স্যালুট জানাতেই হয়। আমরা খুশি, কারণ এই মুহূর্তে মা ও বাচ্চা দু’জনেই ভালো রয়েছে।’

IVF Sperm Donor : মৃত স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহার করেই মাতৃত্বের স্বাদ, ছকভাঙা সিদ্ধান্তে দিশা দেখাচ্ছেন বোলপুরের সঙ্গীতা
মুরারই এর বাসিন্দা ওই দম্পতির আয় বলতে বাড়িতে থাকা একটি মুদির দোকান। কিন্তু তাদের কোনও সন্তান ছিল না। স্বামী-স্ত্রী কলকাতা ডাক্তার দেখিয়ে দীর্ঘদিন আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানলাভের চেষ্টা করেন। দু’বছর আগে কলকাতার একটি পরীক্ষাগারে স্বামীর শুক্রাণু সংরক্ষণ করা হয়। একবার চেষ্টা করেও সফল হননি। এর মধ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। কোভিডে স্বামী মারা যান। সন্তান কামনায় মৃত স্বামীর শুক্রাণু ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন মহিলা। ওই মহিলার আইনজীবী অনিন্দ্যকান্তি সিনহা বলেন, ‘স্বামী বেঁচে থাকার সময়ে তাঁর সন্তান প্রসবের শারীরিক অসুবিধা ছিল। পরবর্তীতে সেই সমস্যা মিটে গেলেও মৃত্যু হয় স্বামীর। সেই কারণেই এই পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিয়েছেন ওই মহিলা। এটা একটা চরম লড়াই।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *