কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত বাপন। তাঁর কাছে দুটি ফোন থাকে সর্বক্ষণ। আর তাতে রয়েছে সাত হাজার নম্বর। সেখানে ব্লাড গ্রুপ এবং রক্তদাতাদের ঠিকানা উল্লেখ থাকে। যখন কোনও রক্তদাতার নির্দিষ্ট কোনও গ্রুপের রক্ত প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে তালিকা থেকে তাঁর নাম এবং ঠিকানা বার করে তিনি যোগাযোগ করেন এবং সাধারণ মানুষের সাহায্য করেন।
স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শকে পাথেয় করেই জীবনে এগিয়ে যেতে চান তিনি। বাপন ছোটবেলা থেকেই ‘লড়াই করে’ বড় হয়েছেন। সমাজে ছাপ ছাড়তে গেলে পড়াশোনার কোনও বিকল্প নেই, তা ঠারেঠোরে বুঝেছিলেন তিনি। চোপড়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে পড়াশোনার সেভাবে সুযোগ ছিল না। তিনি তাই ৭০ কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়িতে যেতেন প্রতিদিন পড়াশোনার জন্য।
২০১৯ সালে কলকাতা পুলিশে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। ট্রেনিংয়ের পর একদিন তিনি বেলুড় মঠের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে স্বামী বিবেকানন্দের বাণী এবং তাঁর জীবন দর্শনে অনুপ্রাণিত হন। এরপরেই সাধারণ মানুষের সেবা করাই তাঁর জীবনের ব্রত হয়ে ওঠে। রক্তদাতার সমস্যার বিষয়টি তাঁর নজরে আসে।
সেই সময় থেকেই রক্তদাতাদের সমস্যা মেটানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে শুরু করেন তিনি। গত ১৩ বছর ধরে একাধিক রক্তদাতার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। এই সময়ে ১৯টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন তিনি। অনেক সময় নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপের ডোনার পাওয়া মুশকিল হয়ে ওঠে। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রায় ৩০০ জন নেগেটিভ ব্লাড ডোনারের নম্বর সবসময় ফোনে সেভ রাখেন তিনি।
কেউ যদি রক্তের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেই সময় তিনি যোগাযোগ নম্বর দিয়ে দেন বা তাঁদের রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি এই কাজ করে থাকেন। এখনও পর্যন্ত কারও থেকে একটিও টাকা এর জন্য নেননি তিনি। কলকাতা পুলিশের এই ‘ত্রাতা’-র সাহায্যে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন।