Christmas 2023 : হোমমেড ওয়াইন-কেকে জমজমাটি অ্যাংলো পাড়া জমজমাট – kolkata anglo indians are ready to welcome christmas with homemade wine cake


জয়ন্ত সাউ

হেয়ার স্ট্রিট থেকে বউবাজার থানার মাঝের সরু গলিটার সারি দেওয়া লাল বাড়িগুলো আলোয় সেজে উঠেছে। গলিটায় ঢুকতেই চোখে পড়ে নানা বয়সিদের জটলা, এদিক ওদিক ছড়িয়ে। উৎসবের অনুষ্ঠান ঘিরে আলোচনায় ব্যস্ত এই অ্যাংলো পাড়ার বাসিন্দারা। যারা রাস্তায় নামেনি, তারা বাড়ির জানলা থেকেই উৎসুক মুখে তাকিয়ে জটলার দিকে। পাড়ার কচিকাঁচারা সেরে নিচ্ছে ক্রিসমাস ক্যারোলের শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি।

ঘাড় উঁচু করে লালবাড়ির সবুজ জানলাগুলোর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে তারে সারি বেঁধে ঝোলানো সসেজ। কেক বেকিং এর গন্ধ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে। সব মিলিয়ে কলকাতার এই প্রাচীন অ্যাংলো পাড়া দু’হাত বাড়িয়ে প্রস্তুত বড়দিনের উৎসবকে স্বাগত জানাতে।

বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকান সেনাদের থাকার জন্য তৈরি হয় এই বো-ব্যারাকস। সেখানকার বাসিন্দা জি গোমস জানালেন, আজ ২১ তারিখ অ্যালেন পার্কের সঙ্গেই উদ্বোধন হবে এখানকার ক্রিসমাসের। ২২ তারিখ বাচ্চাদের জন্যে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হবে, সান্তাক্লজ এসে বাচ্চাদের উপহার দেবে। ২৩ তারিখ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেইদিন স্থানীয়রা অংশ গ্রহণ করবেন।

এছাড়া বিভিন্ন ফুডস্টল থাকবে। ইতিমধ্যেই বাড়ির সামনে ফুটপাথের স্টলের দেওয়ালে টাঙানো হয়েছে নানা পদের মেনু। কোথাও অথেনটিক চাইনিজ স্যুপ, মিট বল, ফিস বল, মোমো, স্প্রিং রোল, কোথাও অথেনটিক অ্যাংলো। তাতে অন্যতম চিকেন, পর্ক ভিন্দালু, আবার কোনওটায় কাবাব, কোপ্তা, পোলাও, চিকেন মালাই। এছাড়া ঘরে তৈরি কেক, পেস্ট্রি, কুকিজ তো থাকছেই।

বো-ব্যারাকসে এই মূহুর্তে প্রায় ১৩২টি পরিবার থাকে। অনেকে বছরভর বাইরে থাকেন, কিন্তু এই সময়টায় অবশ্যই ফিরে আসেন কলকাতায়। যাঁরা আসতে পারেন না, তাঁরা ভিডিও কলের মাধ্যমেই পাড়ার উৎসবের আমেজ নেন।

মাঝবয়সী ভেলেরি এখন ব্যস্ত ঘর পরিস্কারে। ঠাকুমা ল্যরা কায়রোর তৈরি রেসিপিতেই তিনি ওয়াইন বানান। ডাইনিং-এর চারিদিকে ছড়ানো কেকের উপকরণ, ওয়াইনের বোতল। হাতের কাজ গোছাতে গোছাতেই সহাস্যে জানালেন, ‘বাঙালিদের যেমন পিঠে পার্বণ, আমাদেরও তেমনই এই কেক আর ওয়াইন পার্বণ। এই সময়টা আমরা খুব ব্যস্ত থাকি পরিবারের সকলের জন্যে কেক আর ওয়াইন বানাতে। ছোটো থেকে বড় সকলেরই প্রিয় এই রেড ওয়াইন আর জিঞ্জার ওয়াইন। ঠান্ডায় জিঞ্জার ওয়াইন বেশ কাজে দেয়’।

প্রতি বছরই ভেলেরি রেড ওয়াইন আর জিঞ্জার ওয়াইন বানান পরিবার, আত্মীয়, বন্ধুদের জন্যে। তাই দিয়েই চলে সারা বছর।

নিউ ইয়ার পার্টিতে ফ্রেঞ্চ লোফ দিয়ে চেখে দেখতে পারেন অসাধারণ স্বাদের ‘চিকেন ফ্রিকাসি’!
বাঙালি বাড়িতে আতিথেয়তায় যেমন মিষ্টি, এই অ্যাংলো পাড়ার আতিথেয়তা রেড কিংবা জিঞ্জার ওয়াইন আর সুস্বাদু ড্রাই ফ্রুটস কেক ছাড়া হয় না। ভেলেরির ডাইনিংয়ের দেওয়ালে ঝোলানো ক্রাইস্টের ছবির সামনে রাখা মোমবাতির জ্বলে ওঠা আলো জানান দেয়, সন্ধে নেমেছে। অ্যাংলো পাড়া ব্যস্ত উৎসবের আয়োজনে। আলোর ঝলমলে রোশনাই জানান দেয়, বড়দিন আসছে।

ওয়াইন রেসিপি (বো-ব্যারাকস স্পেশাল)

২১ দিন ধরে চলে ওয়াইন তৈরি। গরমকালে মার্চের শুরুতেই আঙুর কিনে ধুয়ে বড় ড্রামের ভিতর রেখে দিতে হয়। তারপর সেগুলো ভালো মত ফার্মেন্টেড হলে তাকে ফুটন্ত গরমজলে ঢেলে দিতে হয়। চিনি, ইস্ট আর গমের রস মিশিয়ে তাকে ফুটিয়ে যেতে হয়। রেড ওয়াইনের জন্য এই পর্যায়ের পরে চিনিকে ক্যারামেলাইজড করে মেশানো হয়। জিঞ্জার ওয়াইনও তৈরি হয় একই পদ্ধতিতে। সেখানে আঙুরের বদলে আদা দেওয়া হয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *