একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বৃহস্পতিবার দেব বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমার জায়গায় একজন ফুলটাইম এমপি হলে সে আরও ভালো কাজ করতে পারবে। গত দশ বছর ধরে আমি অতটা সময় দিতে পারিনি। এবার আমি পেরে উঠছি না। (সময় বের করতে) সত্যিই সমস্যা হচ্ছে। আমার মনে হয়, একজন ফুলটাইম এমপি হলে আরও ভালো হয়। সে আরও ভালো কাজ করতে পারে কিংবা পারত।’ এই বক্তব্য শুনে তৃণমূলের একাংশ মনে করছেন, রাজনীতির জগতে আদৌ তিনি আর থাকবেন কি না, তা নিয়ে দেবের দোলাচলে ভুগছেন। কারণ, অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনার কাজেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাঁকে। এই দ্বিধার কারণে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন নিয়ে এখনও কিছু ভাবেননি বলে এদিন জানিয়েছেন ঘাটালের সাংসদ।
দেবের কথায়, ‘এবারে আমি কী করব? আমি এখন এটাও ভাবছি না, ২০২৪ সালে আমি টিকিট পাব, কি পাব না। এই (ভাবার) জায়গায় আমি যাইনি। ২০১৯ সালে আমি জানতাম, দিদি যদি (প্রার্থী হতে) বলে, আমি না করব না। কিন্তু এবার আমি অতটা ভাবিনি এখনও।’ দেবের এই বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্ররা কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। জোড়াফুলের এক সাংসদের কথায়, ‘টিকিট পাবেন কি না, এই নিয়েও দেব সংশয় প্রকাশ করেছেন। এটা বিতর্কিত বিষয়। তাই কোনও মন্তব্য করছি না।’
২০১৪-তে প্রথমবার ঘাটালের সাংসদ হন দেব। সাংসদ শতাব্দী রায়ের মতো অতটা সক্রিয় না হলেও ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে কিন্তু দেবকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের রূপায়ন নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। করোনা অতিমারী অথবা বন্যার সময়েও দেবকে কমবেশি দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ, যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী অথবা বসিরহাটের সাংসদ নুসরৎ জাহানের তুলনায় দেবকে ঘাটালে বেশি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। যদিও দেব নিজে মনে করছেন, সাংসদ হিসেবে তাঁর আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল।
দেবের কথায়, ‘সাংসদ হয়ে অবশ্যই মাটির অনেক কাছাকাছি যেতে পেরেছি। বন্যার মতো পরিস্থিতি সামনে থেকে দেখেছি। চেষ্টা করেছি, সুখ-দুঃখে মানুষের পাশে থাকার। তবে কেউই একশো শতাংশ সমস্যার সমাধান করতে পারে না। সবারই কিছু খামতি থাকে। ঘাটালে পুরো সময় দিতে পারবেন, এমন কেউ সাংসদ হলে মানুষের সমস্যার আরও বেশি সুরাহা করতে পারবেন।’
দেবের এই মন্তব্য শুনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, ‘উনি তো চলচ্চিত্র জগতে ছিলেন। কোনওদিন রাজনীতি করেননি। কেন কেরিয়ারের মাঝে হঠাৎ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, সেটাই তো মানুষ বুঝতে পারেনি। রাজনীতির জগতের লোক নন, এমন ব্যক্তিদের মমতা ভোটে দাঁড় করান যাতে তাঁরা সংসদে চুপ করে থাকেন। দেবও এতদিন সেই কাজ করেছেন।’
বিনোদন জগতের ব্যক্তিত্বদের বিজেপিও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে। লকেটের মতো কেউ কেউ টিকে রয়েছেন। আবার পিসি সরকার জুনিয়রের মতো কেউ কেউ ভোটে দাঁড়ালেও দ্রুত রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন। দেবের কথা শুনে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটা তৃণমূলের পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কে পরিবারের সঙ্গে থাকবেন, কে পরিবার থেকে বেরিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকবেন-এটা তাঁদের বিষয়। বিজেপির কোনও সদস্যই এবার ঘাটালে সাংসদ হবেন।’