Mimicry Controversy,ভেংচি না শিল্পকলা? মাইন্ড ইট, মিমিক্রি! – mimicry controversy also started in west bengal politics


দিন পাঁচেক আগে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ডাঙ্কি ছবির প্রোমোশনে এসে শাহরুখ খান নিজের মিমিক্রি নিয়ে নিজেই মজা করেছেন। মজার মধ্যে তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন খানিকটা হতাশাও। ইন্টারনেটের ভিড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁর মিমিক্রি দেখে কিং খানের প্রতিক্রিয়া, ‘আমি এ ভাবে কবে বলেছি ভাই। অ্যায়সি থোড়ি না থা ইয়ার…!’ এ কথা বলতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের উপরে মিমিক্রির বিরূপ প্রভাব নিয়েও কথা বলতে শোনা যায় কিং খানকে।

শাহরুখ যখন এ কথা বলছেন, তখন অবশ্য কারও ধারণা ছিল না, তার পরেই গোটা দেশে রাজনৈতিক আলোচনার পরিসরে চলে আসবে সেই মিমিক্রি। এ ক্ষেত্রে কারণটা অবশ্য কিং খান নন, লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪১ জন বিরোধী সাংসদকে পার্লামেন্ট থেকে সাসপেন্ড করার প্রতিবাদী ধর্নায় সংসদ চত্বরেই উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের মিমিক্রি করেছেন কল্যাণ।

তাঁর ভিডিয়ো মোবাইলবন্দি করেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। আর তা নিয়েই উত্তাল রাজনীতি। ধনখড়ের দাবি, কল্যাণের এই মিমিক্রি অসংসদীয় এবং অধঃপতনের সামিল। বিতর্কের মধ্যে কল্যাণের ব্যাখ্যা ছিল, মিমিক্রি এক ধরনের শিল্পকলা।

আদৌ কি মিমিক্রি শিল্পকলা অথবা ফর্ম অফ আর্ট?

এই প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে ফিরে যান বেশ কয়েক বছর আগে, প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ ও আরজে-অ্যাঙ্কর মীর আফসর আলির একটি কথোপকথনে। তাতে ঋতুপর্ণর স্পষ্ট মত ছিল, ‘যেমন পানিং (অনুপ্রাস) হচ্ছে সাহিত্যের নিকৃষ্টতম প্রকাশ, তেমনই মিমিক্রি আর্টের নিকৃষ্টতম প্রকাশ। এটা কোনও আর্টই নয়!’

এখন আর মীর অবশ্য সেই বিতর্কের মধ্যে ঢুকতে চান না। তবে কল্যাণের ঘটনা প্রসঙ্গে মীরের পর্যবেক্ষণ, ‘মিমিক্রি হচ্ছে এমন একটা ছুরি যা দিয়ে সবজিও কাটা যায়, আবার গলাও কাটা যায়। তাই কে কীভাবে সেটা ব্যবহার করছেন সেটাই সব থেকে বড় কথা।’ মীর এখনও নানা সময়ে বিনোদনের জন্য স্টেজে বা পর্দায় মিমিক্রি করেন।

সে প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, ‘এখন বেশি করি না কম সেই তুলনায় যাচ্ছি না। তবে আমি যে সব অ্যাক্টরকে মিমিক করি, সেটা তাঁদের অ্যাডমায়ার বা শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই। কিন্তু পার্লামেন্টের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে এমন মিমিক্রিকে আমি সমর্থন করছি না।’

মিমিক্রি আর্ট ফর্ম কিনা তা নিয়ে অবশ্য তাত্ত্বিক গবেষণাও প্রচুর হয়েছে। বই বেরিয়েছে একের পর এক। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টসের অধ্যাপক শ্রীমতি মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, গ্রীক শব্দ মাইমেসিস থেকে মিমিক্রির জন্ম। তবে মাইমেসিসের থেকে মিমিক্রির ফারাক রয়েছে।

Kalyan Banerjee VS Jagdeep Dhankhar : ‘মিমিক্রি একটা শিল্প’, ধনখড়কে নকলকাণ্ডে মুখ খুললেন কল্যাণ
শ্রীমতির কথায়, ‘অ্যারিস্টটল, প্লেটোর মতো বহু দার্শনিক এ নিয়ে চর্চা করেছেন। তবে বেশিরভাগ তাত্ত্বিকই মেনে নিচ্ছেন মাইমেসিস হলো সেই আর্ট ফর্ম যা সুপরিকল্পিত ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করা হয়। কিন্তু মিমিক্রি হচ্ছে নেহাতই অনুকরণ। যার মধ্যে শিল্প কম, তাচ্ছিল্যই বেশি থাকে।’

তবে অনেক বিশেষজ্ঞই মেনে নিচ্ছেন, সময়ের সঙ্গে মিমিক্রি সংস্কৃতি চর্চার অঙ্গ হিসেবেই উঠে এসেছে। শহর, গ্রাম, মফস্বলের মঞ্চ খাটানো জলসা হোক অথবা টেলিভিশনের হাস্যকৌতুক শো— সবেতেই মিমিক্রি আর্ট ফর্ম হিসেবেই গৃহীত হয়েছে। মিমিক্রিতে জনপ্রিয় অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের তাই ব্যাখ্যা, ‘মঞ্চে আমি যখন ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, অনিল চ্যাটার্জির মতো অভিনেতাদের মিমিক করি, তখন কিন্তু তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতেই করি।’

Kalyan Banerjee Mimicry : ‘মিমিক্রিতে মাস্টার!’ মোদীর পুরনো ভিডিয়ো পোস্ট করে কটাক্ষ মহুয়ার
মঞ্চের অভিনয়েও অনেক সময়ে মিমিক্রি ব্যবহার করা হয়। সে কথা মেনে নিয়েও প্রবীণ নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী মিমিক্রিকে শিল্প বলতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, ‘কোনও অভিনেতা মঞ্চে মিমিক্রি করেন শিল্পের প্রয়োজনীয়তার তাগিদে। কিন্তু ফর্ম অফ প্রোটেস্ট বলে কেউ কাউকে ভেংচি কাটলে সেটাকে শিল্পের আড়ালে লুকোনো ঠিক নয়।’

যদিও তৃণমূলের অভিনেতা মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক মনে করেন, ‘মিমিক্রি করেই প্রচুর শিল্পী গ্রাসাচ্ছাদন করেন। অনেকের পরিচিতিই মিমিক্রির জন্য। সেখানে মিমিক্রি গ্রহণযোগ্য হলে কেন ব্যক্তিগত জীবনে অথবা প্রতিবাদের ফর্ম হিসেবে তাকে মেনে নিতে অসুবিধে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *