বর্ধমানের আশা পারুইকে অতসীর মতো গুরুতর সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে মাগ্গিগণ্ডার বাজারে সংসারের হাল কিছুটা হলেও ধরতে চেয়েছিলেন তিনি।
আশা ও অতসী, দু’জনেই সফল পরিবারকে বাঁচাতে কিংবা আর্থিক সহায়তা দিতে।
তবে শুধু এই দু’জন কেন? গোটা বাংলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন এমন অসংখ্য মহিলা, যাঁরা সাফল্যের একই সুতোয় বাঁধা পড়ে গিয়েছেন। সেই সাফল্যের নাম ‘আনন্দধারা’। ঝঞ্ঝা কাটিয়ে নিজেরা তো ঘুরে দাঁড়িয়েইছেন, সেই সঙ্গে দাঁড় করিয়েছেন পরিবারকে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন এখন রাজ্য সরকারের সাফল্যের মুকুটে অনন্য এক পালক। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাত ধরে বাজারে ফেরত আসছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ শিল্পের সম্ভার। তাঁদের হাতের কাজের সম্ভার কলকাতার ঝাঁ চকচকে শপিং মলে যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই সে সব সামগ্রী রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে দেশের অন্য প্রায় সব প্রান্তে।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি পণ্য নিয়ে শীতকাল জুড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে মেলা। শুক্রবার নিউ টাউন মেলা প্রাঙ্গণে শুরু হলো ‘সরস’ মেলা। সেখানে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে তৈরি জিনিসের পাশাপাশি থাকছে দেশের অন্যান্য রাজ্যের এমন সব গোষ্ঠীর তৈরি পণ্যও। গত বছর সরস মেলায় মাত্র ১২ দিনে ১২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এ ভাবেই লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। বাংলায় এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ৭০ হাজার, একটি রাজ্যের নিরিখে যা দেশে সর্বাধিক।
প্রান্তিক এলাকার দরিদ্র মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য ২০১৯ সালে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল লাইভলিহুড্স মিশন’ শুরু করে ‘আনন্দধারা’ প্রকল্প। ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে মহিলাদের সক্ষম করে তোলা হয়। পাশাপাশি, এই প্রকল্পে নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গোষ্ঠীর সদস্যদের ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে। এই মডেল-ই সাফল্য এনে হাসি ফোটাচ্ছে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবারে।
পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রায় ১৪ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। ফলে, এক সময়ে যাঁরা ছিলেন নিছক ঘরের বৌ, এখন তাঁরাই হয়ে উঠছেন অন্ত্রপ্রনিয়র।
ঢাকুরিয়ায় তৈরি হয়েছে গোষ্ঠীগুলির বিভিন্ন পণ্যের স্থায়ী বিপণনকেন্দ্র ‘সৃষ্টিশ্রী’। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা শহরে খোলা হয়েছে সৃষ্টিশ্রীর আরও ১৭টি বিপণন কেন্দ্র। কলকাতা ও শিলিগুড়িতে প্রতি বছর হয় সরস মেলা। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় সৃষ্টিশ্রী মেলারও আয়োজন করা হচ্ছে।
বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলা, রাস মেলা, গঙ্গাসাগর মেলা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও রাজ্যস্তরের মেলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মেলায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি অংশ নেয়। এ সব থেকে আয় ক্রমেই বাড়ছে। শুক্রবার সরস মেলার উদ্বোধন করেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত দপ্তরের দুই প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা ও বেচারাম মান্না। মেলা চলবে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।