দলের মধ্যে এই দড়ি টানাটানি প্রসঙ্গে অবশ্য কারও নাম করেননি সুকান্ত। তবে তাঁকে এখনও ‘পা-টেনে’ নীচে নামানোর চেষ্টা দলে অব্যাহত বলে সুকান্ত ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ।
বস্তুত, বিধানসভা ভোটের পর দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্তকে রাজ্য সভাপতির চেয়ারে বসানোর পরে অনেকেই ভুরু কুঁচকেছিলেন। দিলীপ প্রকাশ্যেই নতুন রাজ্য সভাপতির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দিলীপের বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই তৃণমূল এখনও সুকান্তকে ‘শিক্ষানবিশ সভাপতি’ বলে কটাক্ষ করে। এদিন বিজেপির বৈঠকে অবশ্য হাজির ছিলেন না দিলীপ।
সূত্রের খবর, বাংলার একাধিক বিজেপি সাংসদও সুকান্তর বিরুদ্ধে নানা সময়ে দিল্লিতে নালিশ ঠুকেছেন। দলের সদ্য-প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরাও ক’দিন আগে ফেসবুক লাইভে বালুরঘাট থেকে সুকান্তর ফের লোকসভা ভোটে জেতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। এ ছাড়াও বিজেপির জেলাস্তরে কিছু নেতাও সুকান্তর বিরুদ্ধে দিল্লিতে কলকাঠি নাড়ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।
এ সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই এদিনের বৈঠকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি ঘুরিয়ে নিজের দলের একাংশকে কাঁকড়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। দলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই সুকান্তর দলের এই ‘কাঁকড়া-তত্ত্ব’ উত্থাপন করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। রাজ্য বিজেপির এক পদাধিকারীর কথায়, ‘দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা ভোট। এখনও যদি দলের একাংশ সুকান্তর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতেই ব্যস্ত থাকে, তাহলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে কখন? তাই সুকান্ত এদিন কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে তাঁদের প্রকারান্তরে সতর্ক করে দিয়েছেন।’
এদিকে, বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন, হাতে সময় খুব কম। সব কিছু দূরে ঠেলে এখন লোকসভা ভোটের প্রচারে সবার রাস্তায় নেমে পড়া উচিত। মঙ্গল পাণ্ডে এদিনের বৈঠকে রাজ্য ও জেলাস্তরের বিজেপি নেতাদের লোকসভা ভোট পর্যন্ত বাকি সব কিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভোট না মেটা পর্যন্ত কারও একটি দিনও ছুটি মিলবে না। সূত্রের খবর, তিনি বৈঠকে বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের আর ১০০-১২০ দিন বাকি। ৩১ জানুয়ারি মধ্যে যা ব্যক্তিগত কাজ আছে সেরে নিন। এরপর ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু আপানাদের কারও ছুটি নেই। আমারও নেই।’ শুভেন্দু বৈঠকে বলেন, ‘ভোট চলে এসেছে। এখন আর ঘরে বসে মিটিং করার সময় নেই। সবাইকে পথে নামতে হবে। মানুষের কাছ যেতে হবে।’
এদিনের বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে ডাকা হয়েছিল সব জেলার সভাপতিকে। এদিন রাতেই শহরে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) বিএল সন্তোষ। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি বেশ কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠক সারবেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে।