‘একজন ফুলটাইম সাংসদ থাকলে তিনি মানুষের জন্য আরও ভালো কাজ করতে পারবেন’
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ দেব তথা দীপক অধিকারী সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন। এরপর থেকেই ঘাটালের রাজনৈতিক মহলে ‘মতামতের বন্যা’ বয়ে গিয়েছে। তবে কি রাজনৈতিক সন্ন্যাসের সুর দেবের গলায়? ইতিমধ্যেই জেলার কর্মীদের মধ্যে চলছে গুজগুজ-ফিসফাস।
দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। INDIA জোটের আসন ভাগাভাগির দিকে এখন সমস্ত মহলের নজর। এরই মধ্যে ঘাটালের মতো হাইভোল্টেজ কেন্দ্রের প্রার্থী কে হবে? তা নিয়ে এখন থেকেই চর্চা তুঙ্গে। অন্যদিকে, মুচকি হাসছে গেরুয়া শিবির। ২০১৪ সালে কেরিয়ারের মধ্যগগনে ছিলেন দেব। পাগলু, চ্যালেঞ্জ থেকে শুরু করে তাঁর পরপর সিনেমা সুপারহিট। সেই সময় রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে রীতিমতো সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই তাঁর বাড়ি। তারকা হলেও তাঁর ‘ভূমিপুত্র ফ্যাক্টর’ কাজ করেছিল বিস্তর। বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। ২০১৯ সালেও ঘাটালে তাঁকেই সৈনিক করে তৃণমূল। BJP-র তরফে প্রতিপক্ষ ছিলেন ভারতী ঘোষ। কিন্তু, দেবের জাদু এই বারও কাজ করে। ব্যবধান কমলেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন তিনি।
অন্যান্য তারকাদের তুলনায় নিজের কেন্দ্রে তাঁর ‘হাজিরার হালহকিকত’ অনেকটাই ভালো। কিন্তু, তার পরেও কেন দেবের কণ্ঠে এই সুর! এই নিয়ে দলের কর্মীদের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। ঘাটালের রাজনৈতিক মহলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়, দেব এবং প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের ‘সম্পর্ক সমীকরণ’।
এই যাবতীয় জল্পনা প্রসঙ্গে ঠিক কী বলছেন তিনি? দেবের ‘ফুল টাইম সাংসদ’ মন্তব্য প্রসঙ্গে শঙ্কর দলুই বলেন, ‘যে যাঁর অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলেছেন। দল বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। দেব কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথাটি বলেছেন তিনি জানেন। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, দেব খুব সচেতনভাবে কথাটি বলেছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন হোলটাইমার কেউ দায়িত্ব পেলে মানুষের কাছে আসা যাওয়া বাড়বে। দলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
দেব নিজের মনের কথা বলেছেন এবং সেখানে অন্তর্দ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নেই বলেই মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন এই বিধায়ক। অন্যদিকে, ঘাটালের তৃণমূল নেতা তথা দেব ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত রামপদ মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাক্ষাৎ ছিল। ওই অংশটুকু কেটে দেখানো হয়।’ অর্থাৎ ফুল টাইম সাংসদ কথাটি একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে বলা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
রামপদ মান্না আরও বলেন, ‘দল দেবের উপর ভরসা করছে। তবে দেব কী করবেন তাই চিন্তা! তিনি সময় কম দিলেও সব কাজে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন। ‘ দেবের কোনও বিকল্প হতে পারে না বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে দেবের এই বক্তব্য নিয়ে শোরগোলের আঁচ গিয়ে পড়েছে জেলা বিজেপির অন্দরেও। এই প্রসঙ্গে জেলা বিজেপি সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে হয়তো হাতে গোনা কয়েকবার এসেছেন দেব। তিনিও দেখতে পেয়েছেন তাঁর প্রতিনিধিরা কোনও কাজ করেননি। আমরাও মনে করি অভিনেতাকে ফিল্ম জগতেই ভালো লাগে।’
অন্যদিকে, দেবের এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যখন জল্পনা তুঙ্গে সেই সময় এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘২০২৪ সালে কে কোন কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়বেন তা নির্দিষ্ট করবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে কেউ বলতে পারেন না। ঘাটালে কে দাঁড়াবে তাও ঠিক করবেন তিনিই। তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করে জয়লাভ করবে। তা দেব হোন বা অন্য কেউ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সেই নির্দেশ দেবেন।’