সন্দেশখালি-কাণ্ডে রাজ্যপাল ‘ব্যানানা রিপাবলিকে’র কথা বললেন! কী এই কলা প্রজাতন্ত্র? ।C V Ananda Bose utters Banana Republic about sandeshkhali case what is this Banana Republic


জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: রাজনীতিকে অনেকেই শিল্প বলেন। মানে তা এক রকমের আর্ট বা কলা আর কী! বাংলায় এই রাজনীতি-শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই রসজ্ঞের আলোচনার বস্তু। তবে সম্প্রতি সেই কলার বাজারে আমদানি হল অন্য কলাও! মানে খাওয়ার কলা, খোদ ‘ব্যানানা’ই। কী ভাবে? সন্দেশখালি-কাণ্ডে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন বাংলায় জঙ্গলরাজ চলছে। এর সূত্রে তিনি ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন। এবং তা নিয়ে দানা বাঁধছে বিতর্ক। কিন্তু কী এই ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ বা ‘কলা প্রজাতন্ত্র’?

আরও পড়ুন: Attack on ED | Governor CV Ananda Bose: সন্দেশখালিকাণ্ডে সরব রাজ্যপাল, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি বিরোধীদের…

শব্দটি যে কোনও দেশের পক্ষেই অবমাননাকর বলে মনে করা হয়। ব্যানানা রিপাবলিক বা কলা প্রজাতন্ত্রের অর্থ, এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যার অর্থনীতি শুধু একটি মাত্র পণ্যের (মানে, সেই পণ্য রফতানি থেকে আয় করা রাজস্বের) উপরই নির্ভরশীল। ফলস্বরূপ, এ জাতীয় দেশ বা রাজ্যগুলি সাধারণত বিদেশি কোম্পানি বা শিল্প দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

উনিশ শতকের শেষের দিকে আমেরিকান কর্পোরেশনগুলির মাধ্যমে কলাচাষের রমরমা হয়। কলাচাষের সূত্রেই মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় জমি দখল ও শ্রমিকদের শোষণ চলে। সেই প্রেক্ষিতেই শব্দটির উৎপত্তি।

কলা প্রজাতন্ত্র তকমাধারী দেশের বা রাজ্যের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। এর প্রশাসন দুর্বল, প্রায়ই সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি, সমাজের মাত্র কয়েকটি অংশেই সমস্ত সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য লাগামছাড়া। এই ব্যবস্থায় নীচুতলার লোকেরা আরও বেশি নিপীড়িত হয়। তাই নাগরিক অস্থিরতা দেখা দেয়, থাকে ঘন ঘন বিদ্রোহ বা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার ইঙ্গিতও। দেখতে গেলে কলা প্রজাতন্ত্র মোটেই কোনও প্রজাতন্ত্র নয়। কারণ এর নাগরিকদের কোনও সার্বভৌমত্বই থাকে না এবং এর প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণের কাজটি করা যায় না। কলা প্রজাতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের একটি রূপ বলা যেতে পারে। যে-পরিস্থিতিতে রাজ্যটি বা দেশটি মুনাফা অর্জনের জন্য মূলত ব্যক্তিগত কোনও বাণিজ্যিক উদ্যোগের দ্বারাই পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থায় নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু সেগুলি সাধারণত কারচুপি দিয়ে সম্পন্ন হয়। হালে ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ শব্দটি লাগামছাড়া দুর্নীতি এবং সেই দুর্নীতি দমন করতে না পারার পরিস্থিতির বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়।

ব্যানানা রিপাবলিক শব্দটি ১৯০১ সালে আমেরিকান লেখক ও. হেনরি প্রথম ব্যবহার করেছিল। তাঁর একটি ছোট গল্পে। আনচুরিয়া নামক একটি কাল্পনিক দেশকে ও হেনরি কলা প্রজাতন্ত্র বর্ণনা করেছেন। হন্ডুরাসে তাঁর অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এটা বলেছিলেন তিনি। যেখানে তিনি ১৮৯০-এর দশকে বেশ কয়েক মাস বসবাস করেছিলেন। 

তবে কলা প্রজাতন্ত্রের ধারণা কিন্তু আরও পুরনো। ১৮৭০ সালের। লরেঞ্জো ডাও বেকার জ্যামাইকা থেকে কলা কিনে বস্টনে বেচতে শুরু করেন। এর মাধ্যমে সেখানে কলার চাহিদা তৈরি হয়। কালক্রমে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানি এই বাজারের একটি বড় অংশ দখল করে নেয়। বিশ শতকের শুরুতে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশে ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির অনেক কলাবাগান ছিল।

এর অর্থ, কলার সূত্রে, মানে, কলার ব্যবসার সূত্রে একাধিপত্য, গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি, বিশৃ্ঙ্খলা, অনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটা ধারণা তৈরি হয়ে উঠল। ক্রমে, তা পলিটিক্যাল বিষয়ে সংযুক্ত হল। ও হেনরির মতো লেখক তাঁর গল্পে শব্দটিকে ব্যবহার করে ভিন্ন মাত্রা দিয়ে দিলেন। এর পর থেকে ঘুরে-ফিরেই এর ব্যবহার চলেছে। ক্রমে তা রাজনীতিক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের প্রতি আক্রমণ শানানোর এক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: Liquor Sales: ফের ‘আবগারি-রেকর্ড’, সড়ে ২৩ কোটির মদ খেয়ে ২০২২-২৩ সালে শীর্ষে বাংলা

তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই তেমন নয়। মাননীয় রাজ্যপাল যে কোনও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তিনি সেই রাজ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কথা বলেন। তাঁর বা তাঁদের মন্তব্যের মধ্যে সেই অর্থে রাজনীতি খোঁজার কথা নয়। এক্ষেত্রে কী হয়েছে, কী হচ্ছে, তা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক মহলই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারবে। 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *