Ration Scam Latest News: জ্যোতিপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ শঙ্কর আঢ্য গ্রেফতার – sankar adhya bongaon municipality chairman arrested in ration scam


এই সময়, বনগাঁ: রাজ্যজুড়ে ইডির হানাদারির রেশ গিয়ে পড়ল বনগাঁতেও। শুক্রবার সাতসকালেই বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি শঙ্করের শ্বশুরবাড়ি, ভাইয়ের কারখানা ও দুই কর্মচারীর বাড়িতেও একযোগে অভিযান চালায় ইডি। প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ শঙ্করকে কিছুদিন আগেই নোটিস পাঠিয়ে ডেকেছিল ইডি। কিন্তু হাজিরা এড়িয়ে যান শঙ্কর। এক সময়ের দাপুটে নেতার বাড়ি ও আত্মীয় বাড়িতে তল্লাশির পর তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানান ইডির এক আধিকারিক। রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে শঙ্করের বাড়িতে আসেন ইডি অফিসাররা। বেশি রাত পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই ছিলেন।

সন্দেশখালির ঘটনার পর এ দিন কোনও ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও বেলা বাড়তেই শঙ্করের বাড়ি এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির সামনে বনগাঁ থানার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ একবার বাড়ির বাইরে এসেছিলেন শঙ্কর। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এই নিয়ে কিছু বলব না। ইডির আধিকারিকরা এসেছেন। তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করছেন। তদন্তে সহযোগিতা করেছি।’

জ্যোতিপ্রিয়র হাত ধরেই একসময় রাজনীতির ময়দানে আসেন শঙ্কর। ২০০৫ সালে প্রথমবার বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলার হন। পরে চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি। বালুর ছত্রছায়াতেই উল্কার গতিতে বনগাঁ শহরে উত্থান ঘটে শঙ্করের। বনগাঁ জুড়ে শঙ্করের দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। শঙ্করের একাধিক ব্যবসাও রয়েছে। কলকাতা, বনগাঁ ও পেট্রাপোল সীমান্তে তাঁর বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের অফিস রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, একসময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ধুর সিন্ডিকেট চালাতেন শঙ্কর। বনগাঁ এবং বাগদায় তাঁর সোনার দোকান রয়েছে। বনগাঁ শহরে রয়েছে হোটেল। এর বাইরে বনগাঁয় শঙ্কর আঢ্যর বিপুল সম্পত্তিও রয়েছে। পাশাপাশি একাধিক খুনের ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল দাপুটে নেতার। বনগাঁর বেতাজ বাদশা সেই শঙ্কর আঢ্যর বাড়িতে ইডির হানাদারিতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে।

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতার একাধিক বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থাগুলিতে নজর পড়ে ইডির আধিকারিকদের। রেশন দুর্নীতির টাকা ঘুরপথে শঙ্করের বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে পাচার হত কি না, রেশন দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে কি না, বিদেশি বিনিময় সংস্থার আড়ালে কোনও আর্থিক লেনদেন ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই এ দিনের ইডির অভিযান বলে জানা গেছে।

বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তৃণমূলের একাধিক সংগঠনেরও মাথায় ছিলেন শঙ্কর। তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্যও বনগাঁ পুরসভার চেয়ারপার্সন ছিলেন। তিনি বর্তমানে পুরসভার ভাইস চেয়ারপার্সন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বনগাঁ থেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন শঙ্কর। কিন্তু দল তাঁকে প্রার্থী না করায় ভোটের প্রচার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন শঙ্কর। রাজ্যজুড়ে প্রবল তৃণমূল হাওয়াতেও গোষ্ঠীকোন্দলে দীর্ণ বনগাঁয় সবক’টি আসনে হারতে হয় দলকে। এর পরেই দলের ভিতরে ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়েন শঙ্কর। দলের সব পদ থেকেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বনগাঁর শিমুলতলায় শঙ্করের বাড়ির ১০০ মিটারের দূরেই তাঁর শ্বশুর বিনয় ঘোষের বাড়ি। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ ইডি আধিকারিকরা একযোগে দুই বাড়িতেই অভিযান চালান। শঙ্কর সে সময় বাড়িতে ছিলেন না। তিনি সকাল দশটা নাগাদ বাড়িতে এলে তাঁকেও জেরা করেন ইডির অফিসাররা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় শঙ্করের পরিবার এবং তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যদেরও। ঘরের আলমারি খুলে বেশ কিছু নথিপত্রের খোঁজেও তল্লাশি চলে। শঙ্করের স্ত্রী, ছেলে এবং ভাই মলয় আঢ্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি অফিসাররা। প্রায় এক ঘণ্টা পর ইডির আধিকারিকরা শঙ্করের শ্বশুর এবং শালার স্ত্রীকে নিয়ে শালার শ্বশুরবাড়িতেও গিয়েছিলেন।

শঙ্করের ভাই মলয়ের আইসক্রিমের কারখানা রয়েছে গাইঘাটার কালোপুর দোগাছিয়ায়। দুপুরে মলয়কে নিয়ে সেই কারখানাতেও তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। শঙ্করের বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের বনগাঁর অফিস চালান অঞ্জন মালাকার। অঞ্জনের বাড়িও শিমুলতলায়। অন্যদিকে, কলকাতার অফিসের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্বজিৎ ঘোষ ওরফে বাপ্পা। ইডি ওই দুই কর্মচারীর বাড়িতেও অভিযান চালায়। শঙ্কর ওরফে ডাকুর বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলিতে তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও একাধিক আত্মীয় ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। আর্থিক দুর্নীতিতে শঙ্করের সঙ্গে তাঁর আত্মীয় এবং দুই কর্মচারীর কী যোগ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতেই এ দিনের অভিযান বলেই জানা গেছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *