Calcutta High Court : জন্মদাত্রী কে? ছেলের পথ আগলে মৌলিক অধিকার – calcutta high court rejected swiss citizen appeal for find out his birth mother


অমিত চক্রবর্তী ও প্রীতমপ্রতীক বসু

এক আইনকে হাতিয়ার করে জন্মদাত্রীর খোঁজ শুরু করেছিলেন সন্তান। কিন্তু তাঁর পথ আগলে দাঁড়াল আর এক আইন। আর এই দুই আইন, বলা ভালো দুই মৌলিক অধিকারের টানাপড়েনে আজও তাঁর জন্মদাত্রী মা-কে দেখতে পেলেন না সুইস নাগরিক ফেবিয়ান রিকলিন, ওরফে রণবীর।

আদৌ পাবেন কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বক্তব্য, জন্মদাত্রীর পরিচয় জানা যেমন একজনের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে, তেমনই গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারও তো মৌলিক! অতএব সেই আইনের আওতায় প্রশাসন যদি কোনও কুমারী মায়ের (রণবীরের মায়ের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছিল) পরিচয় গোপন রাখতে চায়, তা হলে সে ক্ষেত্রেও দোষের কিছু নেই। এবং সেই পদক্ষেপও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রণবীর জানেনই না তাঁর জন্মদাত্রী আজ আদৌ বেঁচে আছেন কি না। থাকলে কোথায়?

১৯৮৮ সালে রণবীরকে দত্তক নিয়েছিলেন এক সুইস দম্পতি। আলিপুর আদালত থেকে দত্তক নেওয়ার সেই কাগজই একমাত্র অস্ত্র রণবীরের। সেটি নিয়েই তিনি খোঁজখবর শুরু করেন তাঁর জন্মদাত্রী মায়ের। নানা সরকারি দপ্তরে চলতে থাকে তাঁর তল্লাশি, চালাচালি হয় বিস্তর চিঠিপত্র। কিন্তু কোনও জায়গা থেকেই তাঁকে সাহায্য করা হয়নি। মায়ের পরিচয় জানায়নি কোনও সরকারি দপ্তর। শুধু তা-ই নয়, যে অনাথ আশ্রম থেকে তাঁকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল, তারাও সাহায্য করেনি বছর পঁয়ত্রিশের যুবক, বর্তমানে সুইৎজ়ারল্যান্ডের নাগরিক রণবীরকে।

নিজের সম্পর্কে কী জানেন রণবীর? তাঁর বক্তব্য, তাঁকে তাঁর কুমারী মা একটি অনাথ আশ্রমে ফেলে চলে গিয়েছিলেন বলে তিনি তাঁর সুইস বাবা-মায়ের কাছে জেনেছেন। তাঁকে যখন ওই সুইস দম্পতি দত্তক নেন, তখন রণবীরের বয়স মেরেকেটে বছরখানেক। রণবীর জেনেছেন সেই অনাথ আশ্রমের নামও যেখান থেকে তাঁকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল— ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর রিহ্যাবিলিটেশন অফ চিল্ড্রেন।

জন্মদাত্রীকে একবার অন্তত চোখের দেখা দেখার তাগিদ এরপর তাড়া করতে থাকে রণবীরকে। মা-বাবা বলে ছোট থেকে যাঁদের চিনে এসেছেন, তাঁদের সঙ্গেই থাকেন রণবীর। কিন্তু কোন বাবা-মা তাঁর জন্ম দিয়েছিলেন, কী ছিল তাঁকে একা ফেলে চলে যাওয়ার নেপথ্যের ঘটনা— এ সব জানতে চান রণবীর। তাই প্রথমেই যোগাযোগ করেন সেই অনাথ আশ্রমের সঙ্গে। কিন্তু তারা ফিরিয়ে দেয়। তারপরে একের পর এক সরকারি দপ্তে যোগাযোগ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই ফল এক। কেউ সেই মায়ের পরিচয় জানাতে নারাজ। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রণবীর।

হাইকোর্ট রণবীরের দাবিতে অবৈধ বলছে না। আবেগের দিক থেকেও রণবীরের দাবিকে খারিজ করছে না। বরং বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর রায়ে স্পষ্টই বলেছেন, ‘নিজেকে চেনা, নিজের প্রকৃত পরিচয় জানা এবং সে সব জেনে সম্মানের জীবনযাপনের যে অধিকার, তার মধ্যেই নিহিত রয়েছে নিজের শিকড় খোঁজার অধিকারের বিষয়টি। ফলে নিজের বায়োলজিক্যাল বাবা-মায়ের খোঁজখবর করার অধিকার ‘রাইট টু লাইফ’ নামক মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।’ যদিও এই মৌলিক অধিকার বিদেশিদের জন্য প্রযোজ্য নয়, কিন্তু যেহেতু রণবীরের শিকড় ভারতেই, তাই তাঁর আবেদনকে এই প্রেক্ষিতে দেখেছে কোর্ট।

Calcutta High Court News: ‘আদতে কি নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ?’ ডায়মন্ড হারবারের SP-কে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু এখানেই দাঁড়ি পড়ছে না। এর উল্টো দিকেও যে রয়ে গিয়েছে আর এক মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন! দত্তক সংক্রান্ত আইন বলছে, যতক্ষণ না সংশ্লিষ্ট জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী চাইছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের যাবতীয় পরিচয় গোপনই রাখতে হবে। তাঁদের পরিচয় প্রকাশিত হতে পারে, এমন কোনও নথি পর্যন্ত কাউকে দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে দত্তক নেওয়া সন্তানের অধিকার কোনও ভাবেই জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারকে লঙ্ঘন করতে পারে না।

এই যুক্তিকে সামনে রেখেই বিচারপতি ভট্টাচার্যর সিঙ্গল বেঞ্চের বক্তব্য, ‘তাঁর বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে আবেদনকারীর নিঃসন্দেহ আইনি এবং সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই অধিকার জন্মদাতা বা জন্মদাত্রীর গোপনীয়তা রক্ষার অধিকারের উপরে নির্ভরশীল। তাঁরা চাইলে পরিচয় প্রকাশিত হবে, না চাইলে নয়।’

ওই যুবকের আইনজীবী ঝুমা সেনের সওয়াল, ‘শিকড়ের সন্ধান কোনও সন্তানের মৌলিক অধিকার। যে সংস্থা এই দত্তক দিয়েছিল, তাদের কাছে জন্মদাত্রীর নথি থাকা জরুরি।’ যদিও সেই সংস্থা জন্মদাত্রীর পরিচয় গোপন রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছে আদালতে। রণবীরকে যে সংস্থার পক্ষ থেকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে, তাদের তরফে আইনজীবী অঞ্জলি পাওয়ার বলেন, ‘হাইকোর্টের এই রায় দেশের ৫০ হাজার দত্তক সন্তানের অধিকারের বিপক্ষে যাবে।’ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ার কথা ভাবছেন রণবীরের আইনজীবীরা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *