শুধু ডিএম, এসপি, বিডিও-রা নন, লোকসভা ভোটে এই প্রথম কমিশনের বদলির কোপে পড়তে পারেন সরকারি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়াররাও। তালিকায় থাকতে পারেন পুরসভা এবং বিভিন্ন নগরোন্নয়ন সংস্থার আধিকারিকরা। টানা তিন বছরের বেশি সময় একই পদে থাকলে তাঁদের ভোটের আগে বদলি হতে হবে— সরকারি ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়াররা এত দিন এই তালিকার বাইরে থাকতেন।
কিন্তু এবার ঠিক হয়েছে, যদি ভোটে প্রভাব খাটানো বা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠে, সে ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়াররাও বদলির হাত থেকে রেহাই পাবেন না। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের কাছে সম্প্রতি এই মর্মে একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের কর্তারা জানাচ্ছেন, ভোটে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের আগে সরকারি আমলাদের বদলি নীতি বহুদিন থেকেই চালু রয়েছে। মূলত যাঁরা ভোট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই এই নীতি প্রযোজ্য। বরাবর সেই তালিকায় বাইরে থাকতেন পুরসভা বা নগরোন্নয়ন সংস্থার আধিকারিকরা। কারণ তাঁরা সরাসরি ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। তা ছাড়া পুর আধিকারিকদের বদলি করলে জরুরি নাগরিক পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। সেই জন্য তাঁদের ছাড় দেওয়া হতো।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে একই পদে যদি কোনও সরকারি আমলার কার্যকালের মেয়াদ তিন বছর পার হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তাঁকে লোকসভা ভোটের আগে বদলি হতে হবে। এই নিয়মের গেরোয় কলকাতা পুরসভার কমিশনার, সেক্রেটারি-সহ রাজ্যের একাধিক পুরসভার বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আমলার ভোটের আগে বদলি কার্যত অনিবার্য। এঁদের অনেকেই একই পদে টানা তিন বছরের বেশি কাজ করছেন।
কমিশনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, পুর আধিকারিকরা সরাসরি ভোট পরিচালনার কাজে যুক্ত না থাকলেও কমিশনের নির্দেশে অনেক সময়ে তাঁদের রাজনৈতিক দলের হোর্ডিং-পোস্টার সরানো এবং ভোটের দেওয়াল লিখন মোছার কাজ করতে হয়। তা ছাড়া ভোটের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার জন্য স্কুল ও কমিউনিটি হল জোগানো এবং পানীয় জলের ব্যবস্থাও করে থাকে পুরসভাগুলিকে।
এই কাজ করতে গিয়ে পুর আধিকারিকরা অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করেন বলে বিরোধী দলের তরফে একাধিকবার অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে কারণেই এই নতুন সিদ্ধান্ত। কমিশনের আরও বক্তব্য, কোনও আধিকারিক যদি তাঁর নিজের জেলায় কর্মরত থাকেন তা হলেও তাঁকে ভোটের আগে অন্যত্র বদলি করতে হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তাঁদের ভোট প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে বলেছে কমিশন। যাঁরা এক্সটেনশনে রয়েছেন, তাঁদেরও ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।