গমগমে ব্রিগেড মাঠে আচমকাই তাল কাটল মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের। কয়েক সেকেন্ডের নিঃস্তব্ধতা। তারপরেই বাম যুবনেত্রী বলে উঠছেন, ‘ভুলে গেছি…’। যদিও ফের তিন সেকেন্ডের মাথায় ব্রিগেডে ধ্বনিত হল-‘এই রণভূমি রণিবে না, বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।’
রবিবার মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ব্রিগেড বক্তব্যের একবারে শেষ লগ্নের দৃশ্য। ব্রিগেড ময়দান থেকে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি বলতে গিয়ে থমকালেন মীনাক্ষী। তাঁর নিপাট স্বীকারোক্তি মন জয় করল সাধারণ মানুষের। লোকভর্তি মাঠে তাঁর ‘সৎসাহস’-এ মুগ্ধ মঞ্চের সামনে বসে থাকা ৬৭-এর আনন্দীদেবী।
বীরভূম থেকে সাতসকালে তিনি হাজির হয়েছিলেন ছেলের হাত ধরে। যৌবনের ডাকে জণগনের ব্রিগেড। আর সেখানে এক তরুণ নেত্রী সোচ্চার গলায় নিজেদের দাবি দাওয়া মেলে ধরার পাশাপাশি মুক্ত কণ্ঠে নিজের ক্ষণিক স্মৃতির প্ররোচণার কথাও বলতে পারলেন! আর কী দাবি থাকতে পারে ‘জণগনের ব্রিগেড’ থেকে! মুগ্ধ চোখে প্রশ্ন আনন্দীদেবীর।
মীনাক্ষী মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার পর হাততালির বন্যা বয়ে যায়। শিক্ষা-কারখানা-কর্মসংস্থান-দুর্নীতি থেকে মুক্তি-মোদ্দা কথা ব্রিগেডের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন তিনি। এরপরেই মঞ্চে ওঠেন মহম্মদ সেলিম। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অতীত বক্তব্য রেকর্ডে খোঁচা দিয়ে নাম না করে মীনাক্ষীর প্রশংসা শোনা যায় এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের কণ্ঠে।
তিনি বলেন, ‘বামপন্থা দক্ষিণপন্থার ফারাক কী? কবি নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন ভুলে গিয়েছি। রণক্লান্ত তো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলতে পারেন ভুলে গিয়েছি? নরেন্দ্র মোদী কী তা বলতে পারেন? কোনও ফ্যাসিস্ট পারবেন না। বামপন্থীরা পারেন। চোরকে চোর বলতে, সাম্প্রদায়িককে সাম্প্রদায়িক বলতে বামপন্থা কোনওদিন ভয় পায় না।’
মীনাক্ষী এদিন মঞ্চ থেকে বলেন, ‘যে মাঠে ওরা বলেছিল খেলা হবে তার দখল নিতে এসেছি। রাজ্যের রাজনীতিতে যখন বামেরা দখল নেয়, সেই সময় ডানদিকের অসুবিধা হওয়াটা স্বাভাবিক।’