সুন্দরবনের কুলতলি এলাকার মেয়েদের একমাত্র স্কুল করুণাময়ী বালিকা বিদ্যায়তন। একসময় এই স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল সাতশো। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে দেড়শোয়। এই পরিস্থিতির জন্য অভিভাবকরা কাঠগড়ায় তুলেছেন তিন বছর আগে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিয়ে আসা গার্গী তালুকদারের দিকে। তাঁর লাগাতার অনুপস্থিতিই স্কুলের অবনতির মূল কারণ বলে মনে করেন অভিভাবকদের একাংশ।
তাঁদের মতে প্রধান শিক্ষিকা না আসায় স্কুলে ঠিক মতো পঠনপাঠন হয় না। এমনকী অনেক ছাত্রীই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে চেনে না। এ নিয়ে দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে শনিবার স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষিকা গার্গী তালুকদার। অভিভাবকদের মতে, এক বছর পরে প্রধান শিক্ষিকার পা পড়ল স্কুলে।
প্রধান শিক্ষিকার স্কুলে আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশেপাশের গ্রাম থেকে অভিভাবকরা একে একে জড়ো হন স্কুলে। দিনে দিনে পড়ুয়ার সংখ্যা কমার জন্য তাঁরা প্রধান শিক্ষিকার দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন। এরপর স্কুলের গেটে তালা মেরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকরা। এক ঘন্টা আটকে রাখা হয় প্রধান শিক্ষিকাকে। প্রধান শিক্ষিকার দ্রুত বদলির দাবি তুলে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়।
অভিভাবকদের একজন সরস্বতী মাঝি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষিকার জন্য চোখের সামনে স্কুলটি আজ রসাতলে চলে যাচ্ছে। নানা অছিলায় উনি স্কুলেই আসেন না। আমরা তাই স্কুল বাঁচাতে বাধ্য হয়েছি প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
খবর পেয়ে মৈপীঠ উপকূল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী চলে আলসে স্কুলে। পুলিশের সামনেই প্রধান শিক্ষিকার বদলির দাবিতে বিক্ষোভ আরও জোরদার হয়ে ওঠে। স্কুল বাঁচানোর জন্য ওসির পা ধরে অভিভাবকদের কয়েকজন করুণ আর্তি জানাতে থাকেন। কোনও মতে পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়। কিন্তু স্কুলের মধ্যে আটকে পড়া প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধারে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় পুলিশকর্মীদের।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই প্রধান শিক্ষিকা গার্গী তালুকদার বলেন, ‘বাগুইআটি থেকে এতটা পথ পেরিয়ে আমি স্কুলে আসি। নানা কাজে আমাকে স্কুল শিক্ষা দপ্তরে যেতে হয়। তা ছাড়া স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যাও কম। তার মধ্যে দিয়ে সব কিছু সামাল দিতে হচ্ছে। অথচ মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে স্কুলের মধ্যে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। আমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডিআই সুজিত মাইতি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব কী ঘটেছে।’