বিষয়টি অবৈধ বলে মানতে চায়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। প্রশাসন জানিয়েছে তীর্থকর নেওয়া হচ্ছে না। পার্কিং ফি-এর সঙ্গে তীর্থকর গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয় বলে মত জেলাশাসকের। যদিওভিন রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের গাড়ি থেকে পঞ্চায়েত সমিতির নামে বিল কেটে টাকা আদায়ের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবেন্দু নস্কর বলেন, ‘মুখে তীর্থকর মকুবের কথা বলে ঘুরপথে কাটমানি আদায় করছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি। তাতে ভিন রাজ্যের মানুষের কাছে রাজ্যের মুখ পুড়ছে।’ পার্কিং ফি-এর নামে বিল ছাপিয়ে টাকা আদায় নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, ‘পার্কিং ফি-এর নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত ভিন রাজ্য থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা। এ ভাবে টাকা তোলার কোনও এক্তিয়ার নেই কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির।’ যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল পরিচালিত কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মদনমোহন হালদারের দাবি, ‘কোনও অবৈধ কাজ করা হয়নি। বৈঠক করে সবার মত নিয়েই পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে৷ বিরোধীরা এসে দেখে যাক পার্কিংয়ের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে কি না।’
উল্লেখ্য, কাকদ্বীপের লট নম্বর আটের চার নম্বর ভেসেল ঘাটের রাস্তায় ঢোকার মুখে এই পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে ভেসেলে চেপে মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে যান পুণ্যার্থীরা। তাই অন্যান্য বছরের মতো এ বারও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লট নম্বর আটের কাছে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী পার্কিং। এই পার্কিং স্পেসে দাঁড়ানো ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থী থেকে পর্যটকদের প্রত্যেকটি গাড়ি থেকেই পার্কিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে।
বাইকের জন্য কুড়ি টাকা, অটোর জন্য ২৫ টাকা, ছোট গাড়ির জন্য ৭৫ টাকা এবং বড় গাড়ির জন্য ১৪০ টাকার উল্লেখ রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বিলে। রবিবার লট নম্বর আটের অস্থায়ী পার্কিংয়ে গিয়ে দেখা গিয়েছে শাসক দলের স্বেচ্ছাসেবকরা প্রত্যেক গাড়ি পিছু টাকা আদায়ের জন্য কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির নামাঙ্কিত এবং স্ট্যাম্প লাগানো রসিদ তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চালকদের হাতে।
তৃণমূলের এক স্বেচ্ছাসেবক শম্ভুনাথ ঘড়ুই বলেন, ‘পঞ্চায়েত সমিতির নির্দেশেই আমরা এই পার্কিং চার্জের জন্য প্রত্যেক গাড়ি থেকে টাকাটা তুলছি।’ পার্কিং ফি নেওয়ায় স্বভাবতই ক্ষুব্ধ পুণ্যার্থীরা। মহারাষ্ট্র থেকে আসা পুণ্যার্থী দলের গাড়ির চালক কেদারনাথ বলেন, ‘আগেও গঙ্গাসাগরে এসেছি। কাকদ্বীপের এই অস্থায়ী পার্কিংয়ে বাস রেখেছিলাম। কখনও পার্কিং চার্জ দিতে হয়নি। এ বার ১৪০ টাকা করে পার্কিং চার্জ নিল।’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘গঙ্গাসাগরে আসা পুণ্যার্থীদের থেকে এক টাকাও তীর্থকর নেওয়া হচ্ছে না। গাড়ি পার্কিংয়ের চার্জ নিতেই পারে। তবে কে নিচ্ছে তা আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তীর্থকর আর গাড়ি পার্কিংয়ের চার্জ দুটো জিনিস আলাদা। দুটোকে এক করলে হবে না।’