তবে রেশন দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা পাচারে ব্যবহার করা হয়েছে বেশ কয়েকটি এফএফএমসি (ফুল ফ্লেজ়েড মানি চেঞ্জার্স) এজেন্সিকে। আদালতে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছে, খাতায়কলমে ওই এজেন্সিগুলির মালিক অন্য কেউ হলেও, প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের কন্ট্রোল করতেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা শঙ্কর আঢ্য। যদিও শঙ্করের একার পক্ষে এতগুলো এফএফএমসি-কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, নাকি নেপথ্যে অন্য কারও ‘মস্তিক’ রয়েছে—তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে শঙ্কর ওরফে ডাকু জালে পড়তেই প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম চলেছে বলে হদিশ পেয়েছে ইডি। তার মধ্যে ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুরও ভূমিকা রয়েছে বলে শনিবার আদালতে দাবি করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
ইডি সূত্রের দাবি, বালুর সঙ্গে শঙ্করের রাজনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি আর্থিক লেনদেনও শুরু হয়েছিল বেশ কয়েক দশক আগে থেকে। বালু খাদ্যদপ্তরের দায়িত্ব পাওয়ায় উত্তর ২৪ পরগনায় শঙ্করের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও শঙ্করের মূল ব্যবসা ছিল বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের। পরে ‘আঢ্য ফরেক্স প্রাইভেট লিমিটেড’-এর মাধ্যমে রেশন দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা, ডলারে কনভার্ট করে শঙ্কর বিদেশে পাচার করেছেন বলে দাবি ইডির।
তদন্তকারীদের দাবি—খাদ্য দপ্তরের মন্ত্রী থাকায় ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান এবং ‘চন্দক ব্রাদার্স’-এর মতো মিল মালিকদের সুবিধা পাইয়ে দিতেন বালু। রেশনের টাকা লুটের পর, বিভিন্ন কোম্পানি ঘুরে সেই টাকা আবার চলে আসত জ্যোতিপ্রিয়র কাছেই। বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে রাখলে বা কোনও সম্পত্তি কিনে ফেললে, তা নজরে চলে আসতে পারে বলে মনে করে শঙ্করের সঙ্গে আঁতাঁত করেন বালু।
সেই টাকা ডলারে কনভার্ট করার ‘ফর্মুলা’ জানা ছিল শঙ্করের। নিজের ‘আঢ্য ফরেক্স প্রাইভেট লিমিডেট’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি এফএফএমসি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কারবার চালাতেন শঙ্কর।
যাঁরা পাসপোর্ট, আধারের প্রতিলিপি জমা দিয়ে এই এজেন্সিগুলিতে মুদ্রা বিনিময় করতেন, তাঁদের নথিই আবার পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করে বিদেশে ভুয়ো নামে ডলার পাঠানোর কৌশল নেওয়া হতো। যদিও শনিবার বালু ও শঙ্কর-দু’জনের আইনজীবীই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ফরেন এক্সচেঞ্জের বিষয়ে টাকা বাইরে যেতেই পারে। কিন্তু তা বলে সেই টাকা দুর্নীতির কি না, ইডি সেই তথ্য পেশ করতে পারেনি।