আর মঙ্গলবার সকাল থেকেই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে দু’দফায় বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে জখম ইডি অফিসারদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি নবীন। পরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও দেখা করেন। সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কয়লা, গোরু, রেশন, পুরসভা এবং শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের ভার ইডির উপর রয়েছে।
কিন্তু এর আগে কোনও মামলার ক্ষেত্রে সন্দেশখালি বা বনগাঁর মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। ওই দুটি ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এধরনের অভিযানে যাতে এমন পরিস্থিতি না হয়, সে বিষয়েও বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের সঙ্গে এদিন দীর্ঘ আলোচনা করেন ডিরেক্টর। রেশন দুর্নীতি মামলায় তদন্তকারী অফিসারের কাছে সে দিনের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান রাহুল।
উপস্থিত ইডি আধিকারিকদের প্রশ্ন করেন, রেশন দুর্নীতির তদন্ত এখন ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে। সূত্রের খবর, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ছাড়াও তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যবসায়ী এবং তৃণমূল নেতার নাম এবং ভূমিকা তাঁকে জানানো হয়। এই মামলায় আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালানো প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই পরবর্তীকালে অভিযান চালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
সকলের বিস্তারিত বক্তব্য শোনার পরে তদন্তকারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, সে বিষয়ে সিআরপিএফ এবং সিআইএসএফ-এর আইজিদের সঙ্গেও আলোচনা করেন সংস্থার ডিরেক্টর। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন স্ট্র্যাটেজি নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় সংস্থার অফিসারেরা। সে তথ্যও জানানো হয় তাঁকে।
এদিন শুধু রেশন দুর্নীতি নয়, রাজ্যের অন্যান্য কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলার পরে ইডি ডিরেক্টর স্পষ্ট বার্তা দেন, তদন্তের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েই এগোতে হবে। তবে, অভিযুক্তদের পাতা ফাঁদে কোনও ভাবে যাতে পা না দেওয়া হয় সেবিষয়েও সতর্ক করেন তিনি। জানা গিয়েছে, পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হলে কয়লা দুর্নীতির মামলার মতোই রেশন দুর্নীতির তদন্তও দিল্লিতে সরানো হবে কি না, তা-ও ইডি কর্তাদের চিন্তাভাবনায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তদন্তকারীরা ডিরেক্টরকে জানিয়েছেন, হামলার ঘটনায় তাঁদের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হলেও রাজ্য পুলিশের তরফে খুনের চেষ্টা (ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৭ ধারা)-র ধারা যুক্ত করা হয়নি। অথচ, অভিযুক্ত শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতে শ্লীলতাহানি, অনধিকার প্রবেশের মতো ধারা ইডি আধিকারিকদের বিরুদ্ধে রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে ন্যাজাট থানা।
এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই ইডি-র তরফে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এদিকে, মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি রিপোর্ট আকারে রাজ্য সরকারের কাছে চেয়ে পাঠানো হয়েছে।