Sandeshkhali Incident : শাহজাহান কোথায়? তদন্ত নিয়েই তরজা – ed and west bengal police investigation in sandeshkhali issue


এই সময়: লক্ষ্য একজনই, শেখ শাহজাহান। রেশন দুর্নীতি মামলায় পলাতক এই অভিযুক্তকে ঘিরেই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে জোর চাপানউতোর চলছে। পাশাপাশি সন্দেশখালি এবং বনগাঁয় ইডি অফিসারেরা আক্রান্ত হওয়ার পরে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ঘটনার সূত্রপাত, গত শুক্রবার।

তল্লাশিতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে ইডির আধিকারিকরা ন্যাজাট থানায় সরকারি কাজে বাধাদান, খুনের চেষ্টা, চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে, শাহজাহানের কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইডির তদন্তকারীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, অনুপ্রবেশের মতো জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। সেই সূত্রে বুধবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি-র ডেপুটি ডিরেক্টরের বয়ান রেকর্ড করতে যান বসিরহাট এবং বনগাঁ পুলিশ জেলার ডিএসপি পদ মর্যাদার অফিসারেরা। কিন্তু এদিন বয়ান না পেয়েই তাঁরা খালি হাতে ফিরেছেন বলে রাজ্য পুলিশের অভিযোগ।

এই টানাপোড়েনের মধ্যেই আবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা দাবি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যে এফআইআর হয়েছে, তার কপি পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পুলিশ বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হচ্ছে। বুধবার এই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত তাদের মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আজ, বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে।

সন্দেশখালি এবং বনগাঁর ঘটনার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, যাঁরা আইন ভেঙেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এমন কড়া স্টেটমেন্টের পরেও সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শাহজাহান এখনও অধরা থাকায় রাজ্য পুলিশের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ইডি এবং রাজ্য পুলিশ যখন পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপাতে ব্যস্ত, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাহজাহানও তাঁর স্ট্র্যাটেজি বদলাচ্ছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর।

রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে শেখ শাহজাহানের যোগ রয়েছে বলে ইতিমধ্যেই আদালতে দাবি করেছে ইডি। সেই সূত্রে গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে অভিযানে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেখানে গিয়ে প্রহৃত হন তাঁরা। ইডি-র অভিযোগ, অফিসারদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হলেও, পুলিশ এখনও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়নি।

উল্টে অভিযুক্তদের পরিবারের অভিযোগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই বুধবার সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে ক্যামেরা নিয়ে হাজির হন বসিরহাট জেলা পুলিশের ডিএসপি সানন্দা গোস্বামী। বেরিয়ে যাওয়ার মুখে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনবার নোটিস দেওয়া হয়েছিল। যিনি অভিযোগকারী অর্থাৎ ডেপুটি ডিরেক্টর, তাঁর বয়ান নিতে দু’বার এলাম। কিন্তু এ দিন তিনি ব্যস্ত রয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’ শাহজাহান কোথায়, সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য ডিএসপি দেননি। এর কিছুক্ষণ পরেই ফের ওই ক্যামেরাম্যানদের নিয়ে ইডির দপ্তরে হাজির হন বনগাঁ পুলিশ জেলার ডিএসপি দীপেন্দ্র তামাঙ্গ এবং থানার সেকেন্ড অফিসারও। তাঁরাও বয়ান না পেয়ে ফিরে যান বলে সূত্রের খবর।

ইডি-র অভিযোগের ভিত্তিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, নাকি তিনি নিজেই ন্যাজাট থানায় অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, সে দিকে নজর রয়েছে সকলের। সূত্রের খবর, ইডির অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০৭ (অনিচ্ছাকৃত খুন) ধারা না দেওয়া হলেও, ওই এফআইআরে ৩৭৯ (চুরি করা) এবং ৩৫৩ (সরকারি কর্মীদের বাধা দেওয়া) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, পুলিশের বিরুদ্ধে ইডি-র যে অভিযোগ, তাতে দেখা যাচ্ছে জামিন অযোগ্য ধারায় তারা মামলা করেছে। তবে তা গুরুতর নয়। ওই ধারায় শাহজাহানকে লকআপে আটকে রাখা মুশকিল হতে পারে। শাহজাহান যদি নিজেই আত্মসমর্পণ করেন, তা হলে গুরুত্বের বিচারে জামিনও হয়ে যেতে পারে।

Sandeshkhali News : ‘তল্লাশির আগে শাহজাহানের নম্বরে ফোন, রিসিভ করেও কেটে দেয়!’ চাঞ্চল্যকর দাবি ED-র
সন্দেশখালি এবং বনগাঁয় ইডি অফিসারদের সঙ্গে সেদিন ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল, কারা কারা আহত হয়েছিলেন, অভিযুক্তদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের কী বক্তব্য রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তকারীদের বয়ান রেকর্ড করতে চাইছে পুলিশ। এর পাশাপাশি শাহজাহানকেও খোঁজা হচ্ছে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ। বুধবার বাসন্তি হাইওয়েতে ন্যাজাট থানার তরফে বিভিন্ন বাসে তল্লাশি চালানো হয়।

সকাল থেকে সন্দেশখালির রাজবাড়ি এলাকায় ছোট-বড় গাড়ি দাঁড় করিয়েও তল্লাশি করে পুলিশ। সন্দেশখালির সরবেড়িয়া থেকে ধামাখালির দিকে ৩ কিলোমিটার এগোলেই আকুঞ্জিপাড়া মোড়। এখানেই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাহজাহানের বাড়ি। এদিন সেই বাড়ির সামনে ভাঙচুর হওয়ার গাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক দল।

ইতিমধ্যে এই গোটা পর্বকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি। তারা আদালতে জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতির মামলায় তল্লাশি করতে গিয়ে হামলার মুখে পড়লেও, তাদের অফিসারদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর করেছে। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। যদিও বসিরহাট কোর্টে খোঁজ নিয়ে তারা এফআইআরের কপি পাননি। ওয়েবসাইটেও তা আপলোড করা হয়নি। উল্টে, পুলিশ প্রতিদিন ইডি অফিসে এসে কোন কোন অফিসার সে দিন সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন, তা খোঁজ করছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *