এ দিকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে লাগাতার জলোচ্ছ্বাস আর ভাঙনে কপিলমুনির মন্দিরের দিকে এগিয়ে আসছে সমুদ্র। ফলে আগের চেয়ে ছোট হয়ে গিয়েছে সমুদ্রতট। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাই এ বার মেলার শুরুতেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ২ নম্বর স্নানঘাট। ১ থেকে ৫ নম্বরের বাকি স্নানঘাট খোলা থাকলেও, আগের মতো সমুদ্রতটে ঢালাও জায়গা আর নেই।
অল্প পুণ্যার্থীর জমায়েতেই প্রবল ভিড় হয়ে যাচ্ছে। তারমধ্যে বৃহস্পতিবার অমবস্যার কোটালের জেরে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যায়। জোয়ারের সময় তাই পুণ্যার্থীদের সমুদ্রস্নানে সতর্ক করে দেওয়া হয়। পুলিশও কড়া নজর রেখেছিল। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘ভাঙন আটকানোর জন্য রাজ্য সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। সেচ দপ্তর প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে।’
গঙ্গাসাগর মেলা চত্বর ইতিমধ্যে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সমুদ্র সৈকতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা মাইকে লাগাতার প্রচার করছেন। নজর রাখা হচ্ছে কোনও পুণ্যার্থী যাতে গভীর সমুদ্রে না চলে যান। এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ জলপথে স্পিড বোট ও হোভাক্রাফ্টে টহল দিচ্ছে।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সমুদ্র সৈকতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশ পাহারা। প্লাস্টিক দ্রব্য যাতে সাগরে না পড়ে তাই ব্লক প্রশাসনের তরফে সমুদ্রতটে মোতায়েন করা হয়েছে সাফাইকর্মীদের। গঙ্গাসাগরে খোলা হয়েছে মেগা কন্ট্রোল রুম। মূলতই কন্ট্রোল রুম থেকেই গঙ্গাসাগর, কচুবেড়িয়া, লট নম্বর আট, নামখানা এবং বেনুবন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।
মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান শুরু হবে ১৪ জানুয়ারি রাত বারোটায়। চলবে ১৬ জানুয়ারি বেলা ১২টা পর্যন্ত। এ দিনও ভোর থেকে গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ঢল নামতে শুরু করে। কাকদ্বীপের লট নম্বর আট এবং নামখানা থেকে নদী পেরিয়ে সাগরের ঢুকতে দেখা যায় হাজার হাজার পুণ্যার্থীকে। এ বার কুম্ভ মেলা নেই, তাই পুণ্যার্থীর সংখ্যাও গত কয়েক বছরের তুলনায় বাড়বে বলে অনুমান করছে প্রশাসন।
মেলার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে দু’হাজার ২৫০টি সরকারি বাস, পাঁচশোটি বেসরকারি বাস। চারটি বার্জ, ৪৫টি ভেসেল ও একশোটি লঞ্চ চলছে। একটি স্থায়ী দমকলকেন্দ্র ও দশটি অস্থায়ী দমকলকেন্দ্র রয়েছে। রাখা হয়েছে ৫০টি দমকলের ইঞ্জিন। এ বারও পুণ্যার্থীদের সহায়তার জন্য রয়েছেন সাগরবন্ধুরা। ভেসেল ও লঞ্চে জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এ বারও গঙ্গাসাগর মেলায় থাকছে ই–স্নান, ই–দর্শন এবং ই–পুজো।