বৃহস্পতিবার সকালে বাঘের পায়ের ছাপ দেখার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে রায়দিঘি রেঞ্জের বনকর্মীরা নৌকা করে নাইলনের জাল ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চলে আসে ওই এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় মৈপীঠ উপকূল থানার ওসি স্বপন বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। বৃহস্পতিবার দিনভর এলাকাবাসীকে মাইকিং করে বাঘ সম্পর্কে সজাগ করেন পুলিশকর্মীরা।
বনকর্মীরা গৌড়েরচক গ্রাম লাগোয়া নদীর চরে যে জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে, সেই ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত বাঘের অবস্থান জানতে পারেননি। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে যাতে বাঘটি রাতের অন্ধকারে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়তে না পারে, সেই কারণে গ্রাম লাগেয়া এলাকায় নাইলনের জাল দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। গ্রামের উল্টো দিকে থাকা নদীর দিকটা খুলে রাখা হয়েছে যাতে রাতের অন্ধকারে বাঘ তার নিজের ডেরায় ফিরতে পারে।
গ্রামের বাঁধ বরাবর রাত প্রহরার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মশাল জ্বালিয়ে সেখানে দফায় দফায় টহল দেন বনকর্মীরা। দিন পনেরো আগে ওই একই এলাকায় আজমলমারি জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে নদী সাঁতরে চলে এসেছিল গৌড়েরচকে। বনকর্মীরা রীতিমতো তাড়া করে বাঘটিকে জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় জানা, দিবাকর প্রধান বলেন, ‘এই ভাবে যদি বারবার বাঘ জঙ্গল থেকে এখানে চলে আসে আমরা পরিবার নিয়ে বাস করব কী ভাবে?’
বারে বারে লোকালয়ে বাঘ চলে আসার পিছনে উঠে এসেছে একাধিক কারণ। সুন্দরবনে দীর্ঘদিন ধরে বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়া বণ্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞ অনিল মিস্ত্রি বলেন, ‘শীতকালে সুন্দরবনের বাদাবন জুড়ে দাপাদাপি বাড়ে বাঘেদের। এমনিতেই খাবারের সন্ধানে বাঘ এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাতাযাত করে স্বাভাবিক নিয়মে।
এ ছাড়া এটা প্রজনন কাল হওয়ায় পুরুষ বাঘেদের মধ্যে সঙ্গিনীর দখল নিয়ে লড়াই বাধে। সেই লড়াইয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পুরুষ বাঘ অনেক সময় এঁটে উঠতে না পেরে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া বাঘিনীও সন্তান প্রসবের জন্য নিরাপদ স্থান খোঁজার কাজ চলে চালায়।’ বাঘ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই সময় লোকালয়ে বাঘ আসার অন্যম কারণ পাকা ধানের গন্ধ। জেলার ডিএফও মিলন কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘বনদপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত ধরনের বন্দোবস্ত তৈরি রাখা হয়েছে।’