প্রদ্যুত্ দাস ও কিরণ মান্না : আগামী ১৯ জানুয়ারি হলদিবাড়িতে জনসভা রয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। তার আগেই উত্তরের রাজনীতি তোলপাড় দলবদলের জল্পনায়। উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে জল্পনা রয়েছে মেখলিগঞ্জের বিধায়ক পরেশ অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল পরেশের বিরুদ্ধে। এবার একেবারে দল বদলের জল্পনা।
আরও পড়ুন- রক্ত থাকতে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে দেব না, রেলের ফরমানে সাফ কথা মমতার
এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ কোচবিহার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি প্রকাশ্যে এনিয়ে কিছু বলতে নারাজ পরেশ অধিকারীও। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে পরেশের দাবি, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কোনও কারণ নেই। শুভেন্দুর সভার আগে এসব রটানো হচ্ছে।
মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ও ২ নম্বর ব্লক মিলিয়ে ১৭টি জায়গায় ১ লক্ষ প্রদীপ বিতরণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। পরেশ অধিকারীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শুভেন্দু বলেন, বিজেপিতে চোর ডাকাতের কোনও জায়গা নেই। ভারতীয় জনতা পার্টি এমন লোকেদের নেবে না যারা পশ্চিমবঙ্গের বেকার যুবক-যুবতীদের থালা থেকে খাবার তুলে নিয়েছে। তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের নেতারা কি যোগাযোগ করছে? এই প্রশ্নে শুভেন্দু বলেন, আমার সঙ্গে কারোর কোন যোগাযোগ নেই। আমি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সচ্ছন্দ।
অন্যদিকে, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোষামী বলেন, পরেশ অধিকারী-সহ যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কোনও দিন বিজেপি দলে নেবে না। গত লোকসভা ভোটের সময়েও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পরেশবাবু। আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে আমিও ছিলাম। সেইসময় তাঁকে নেওয়া হয়নি। এখনও নেব না। ওর মতো দুর্নীতিগ্রস্থদের দলে নেওয়ার প্রশ্নই নেই।
এরকম জল্পনার যে কারণ রয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দধীরাম রায়। তার দাবি,’শুভেন্দু অধিকারীর জনসভায় বিজেপিতে যোগ দিতে দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন পরেশ বাবু। রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। আমরা জলপাইগুড়িতে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার মত চাকরি চোরকে দলে নেব না। সেই সিদ্ধান্ত দলে জানিয়েছি। দলের রাজ্য নেতৃত্বও সহমত পোষণ করেছে।’
তৃণমূল যুবর জেলার সাধারণ সম্পাদক বাপ্পা মন্ডল বলেন, ‘সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন পরেশবাবু বলে আমাদের কাছে খবর আছে। শুভেন্দুর সভাতেই বিজেপির ঝান্ডা তুলে না নেন।’ আরেক তৃণমূল নেতা তথা মেখলিগঞ্জ ব্লক সহ সভাপতি আনারুল মহম্মদের দাবি,’নিজের স্বার্থে দলবদল করা পরেশ বাবুর অভ্যাস। সেকারনে উনি বিজেপিতে যোগ দিলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে উনি দল ছাড়লে আমাদের দলের কোন ক্ষতি হবে না।’ বাপ্পা বা আনারুলরা তৃণমূলের পরেশ বিরোধী নেতা বলে পরিচিত।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে দলকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিলেন পরেশ অধিকারী। কারণ তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী। অভিযোগ ছিল, প্যানেলে নীচের দিকে নাম থাকা সত্বেও তিনি অনেককে টপকে স্কুলে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে যান। এনিয়ে মামলা ওঠে আদালতে। চাকরি চলে যায় অঙ্কিতার। সেই চাকরি পান ববিতা সরকার নামে অন্য এক প্রার্থী। অঙ্কিতাকে তার মাইনের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিদেপি মাঝে মাঝে এরকম প্রচার করে। কিন্তু দেখা যা বিজেপি থেকেই তৃণমূলে লোক আসছে। এরকম একটা হাওয়া ওরা তুলে দিয়েছে। পেরশ অধিকারীকেও এনিয়ে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তিনি তৃণমূলেই আছেন, তৃণমূলেই থাকবেন। তাঁর পক্ষে বিজেপির মতো একটা সম্প্রদায়িক দলে যোগদান করতে পারবেন না। এসব প্রচার করে বিজেপি কিছু করতে পারবে না। জলপাইগুড়ি আসনে তৃণমূল বিপুর ভোটে জিতবে।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)