চম্পক দত্ত: সমবায় সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে চন্দ্রকোনায় আবারও প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। উভয়েই উভয়ের বিরুদ্ধে বিজেপিকে মনোনয়ন জমায় মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর আলাদা করে জমায়েত সমবায় সমিতি চত্বরে।বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে সমবায় সমিতির ধারে কাছে না গেলেও সমিতির নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে থাকবে তাই নিয়ে মনোনয়নের শেষ দিনে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কাজিয়া ও আলাদা জমায়েতে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়।অশান্তি এড়াতে মজুত ছিল বিশাল পুলিস বাহিনী।
আরও পড়ুন, Bengal Weather: দুর্যোগের জোড়া ফলা! শীতের কামড়ের মাঝেই বৃষ্টির পূর্বাভাস বঙ্গে?
দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের ছাপ কর্মীদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজনেও। দুই গোষ্ঠীর কর্মী সমর্থকদের খাওয়ানোর জন্য তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী দুই জায়গায় আলাদা করে হাঁড়ি চড়ল। এক গোষ্ঠীর আয়োজনে ডিম ভাত, তার সঙ্গে তৈরী তরকারি, অপর গোষ্টীর আয়োজনে হল মাছ ভাত। আর শাসকদলের এহেন কোন্দলকে হাতিয়ার করে কটাক্ষ বিজেপির। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা দু’নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ধান্যঘোরি সমবায় সমিতিতে নির্বাচন ৪ ঠা ফেব্রুয়ারী।
আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৫ থেকে ১৭ তারিখ এই তিনদিন মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা দেওয়ার দিন ছিল। ১৭ তারিখ অর্থাৎ আজ মনোনয়ন জমার শেষের দিনে ভগবন্তপুর দুনম্বর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সহ-সভাপতি ইসমাইল খান ও অঞ্চল সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের অনুগামীরা ধান্যঘোরি সমবায় সমিতি চত্বরেই দুই গোষ্ঠীর জমায়েত হয়। এককথায় সমবায় সমিতিতে তৃণমূলের রাজ কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে এই নিয়ে সকাল থেকে চাপা উত্তেজনা দেখা যায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।
অশান্তি এড়াতে সকাল থেকে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিস বাহিনী মোতায়েন করা হয়। দুই গোষ্ঠীর দাবি,তারা বিরোধীদের কারও মনোনয় জমা দিচ্ছে কিনা তারউপর নজর রাখতেই সমবায় সমিতির সামনে জমায়েত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিতে এভাবে কি জমায়েত করা যায়? তবে শাসকদলের অঞ্চল সহ সভাপতি ইসমাইল খানের দাবি,মনোনয়ন জমার প্রথম দিন থেকে তারা সমবায় সমিতির সামনে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। কারণ বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া ঠেকাতে।
কিন্তু প্রথম দিন থেকে অঞ্চল সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়কে দেখা যায়নি আজ শেষ দিনে কেন ওর দলবল নিয়ে জমায়েত করল। ওরা বিজেপির লোকজনকে মনোনয়ন জমায় মদত দিতেই এই জমায়েত করেছে আমরা তা হতে দেবনা। “যদিও অঞ্চল সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় নিজেদের মধ্যে কোন্দলের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বিজেপি যাতে মনোনয়ন জমা না দেয় তার জন্যই এই জমায়েত তৃণমুলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল থাকলেও ভোটের সময় আমরা একসাথেই লড়াই করি।” তবে অঞ্চল সভাপতির এক অনুগামী তথা ভগবন্তপুর দুনম্বর অঞ্চল তৃণমুল কংগ্রেসের অঞ্চল কমিটির সদস্য সেখ নাজির হুসেইন খান অঞ্চলের সহ সভাপতি ইসমাইল খানের বিরুদ্ধেই বিজেপিকে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে এই জমায়েতের কথা স্বীকার করেছেন।
উভয়েই উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সমবায় সমিতির সামনে আলাদা ভাবে জমায়েতে সামিল হয়। এমনকি সকালের দিকে দুই পক্ষই সামনাসামনি হয়ে হাতাহাতির পরিস্থিতিও তৈরি হয়,যা সামাল দিতে হয় পুলিসকে। জানা যায়,এই সমবায় সমিতিতে এখনও পর্যন্ত যা নমিনেশন জমা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস,৯ টি আসনে ৯ টি তেই তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিয়েছে। শাসকদলের এমন জমায়েতে বিরোধীরা একটিও নমিনেশন জমা করতে পারেনি, তারা সমবায় সমিতির ধারে কাছেও যায়নি। এ বিষয়ে চন্দ্রকোনা-১ মন্ডলের বিজেপির মন্ডল সভাপতি সুকান্ত দোলই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর এই জমায়েতকে কটাক্ষ করে বলেন, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী সকাল থেকে সমবায় সমিতির চারদিক ঘিরে জমায়েত করে রেখেছে সে কারণে আমরা মনোনয়ন তোলা বা জমা দিতে যেতে পারিনি।
তৃণমূলের এক গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে আটকানোর জন্য জমায়েত করে রেখেছে বিজেপিকে মদত দেওয়ার জন্য এটা ভুল। এর থেকেই প্রমাণিত তারা চাইছে বিজেপি আসুক এবং কোন পক্ষ সমর্থন করবে সে-নিয়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। আগামী দিনে যখন আমরা যোগদানের দরজা খুলে দেব এই অঞ্চলে তৃণমূল বলে কেউ থাকবে না। “সমবায় সমিতির মনোনয়ন জমাকে ঘিরে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর আলাদা আলাদা জমায়েতকে ঘিরে কোন্দল প্রকাশ্য। বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মনোনয়ন জমার সময় নির্ধারিত ছিল, বুধবার মনোনয়ন জমার শেষ দিনে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিরোধীরা মনোনয়ন জমা না দেওয়ায়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ধান্যঘোরী সমবায় সমিতির ৯ টি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের।
আরও পড়ুন, Malbazar: পানীয় জলের সমস্যা! খারাপ টিউবয়েলও, নদীর জলই খাচ্ছেন বাসিন্দারা…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp)