শহরে বেআইনি বাড়ি ভাঙার অভিযানে নেমে ফাঁপরে কলকাতা পুরসভা। বেআইনি নির্মাণ বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস আগে অফিসারদের ধমক দিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তার পরেই নড়েচড়ে বসেন বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। শুরু হয় বেআইনি নির্মাণ ভাঙার অভিযান। অন্যতম লক্ষ্য ছিল বিল্ডিং স্যাংশন থেকে পুরসভার রোজগার বাড়ানোও। বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করলে প্রোমোটাররা নকশা অনুমোদনে আরও বেশি করে পুরসভার দ্বারস্থ হবেন, তাতে আয় বাড়বে–এমনই আশা ছিল পুরকর্তাদের।
কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বরং অভিযানে বেরিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আগে বেআইনি নির্মাণ রেগুলারাইজ (আইনসিদ্ধ করা) করে পুরসভা কোটি কোটি টাকা রোজগার করত। সে সুযোগও কমেছে। আবার বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বহু মানুষের রোষেরও শিকার হচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলার-সহ শাসকপক্ষের নেতা-মন্ত্রীরা। ভোটবাক্সেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। ফলে উভয়সঙ্কটে পুরকর্তারা। পুরসভা সূত্রে খবর, এখন প্রতি মাসে গড়ে ৪০-৪৫টা বেআইনি বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।
গত এক বছরে প্রায় ১২০০ বেআইনি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। সব থেকে বেশি ভাঙা হয়েছে ১৬, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯ নম্বর বরোয়। বর্তমানে আরও ৬৪০টি’র মতো বেআইনি বাড়ির তালিকা বানানো হয়েছে। ধাপে ধাপে ভাঙা হবে। বেআইনি বাড়ি ভাঙতে চারটি ডিমলিশন স্কোয়াড তৈরি হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার লোকেরাই বাড়ি ভাঙার কাজ করেন। তার জন্যে পে-লোডারের মতো যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করা হয়। খরচও হচ্ছে দেদার।
পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পুরসভা বাড়তি সক্রিয়তা দেখালেও বিল্ডিং প্ল্যান স্যাংশনের সংখ্যা সে ভাবে বাড়েনি। আগে বছরে দু-আড়াই হাজার বাড়ির স্যাংশন নেওয়া হতো, এখন সেটা ৫০০-৬০০’তে নেমেছে। বাড়ি ভাঙতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই স্থানীয় মানুষের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেক সময়ে শাসকদলের কাউন্সিলাররাও তাতে মদত দিচ্ছেন। পুর-অভিযান নিয়ে মেয়র-পারিষদ বৈঠকে এর আগে
অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অন্যতম মেয়র-পারিষদ বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে না জানিয়ে কেন তাঁর এলাকায় বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন পুরকর্মীরা, তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে তৃণমূলের আর এক মেয়র-পারিষদ বলেন, ‘সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নমধ্যবিত্ত এবং গরিব মানুষ। কারণ, তাঁরাই মূলত নগদ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট বুক করেন। বাড়ি ভাঙা পড়লে তাঁরা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। প্রোমোটারদের গায়ে খুব একটা আঁচ লাগে না। এ ভাবে অভিযানে কোনও উদ্দেশ্যই পূরণ হচ্ছে না।’
তবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘বেআইনি বাড়ি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা ফ্ল্যাট কিনছেন, তাঁদের ভেবেচিন্তেই ফ্ল্যাট কেনা উচিত। সে জন্যে অফিসারদের বলেছি, যাতে ফ্ল্যাট বিক্রির আগেই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া যায়। পুলিশকেও এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।’