বাবুঘাট থেকে শেষ লঞ্চটা শুধু ছাড়ার অপেক্ষা। রাত আটটা বাজলেই একেবারে শুনশান বাবুঘাট। ঘটকপুকুর থেকে বাবুঘাটের মধ্যে যাতায়াত করে ২১৩ নম্বর বাস। ওই বাস অবশ্য তার অনেক আগেই বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। বিকেলে বড়জোড় ৫টা-সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ঘটকপুকুর ফেরার ওই বাস বাবুঘাট স্ট্যান্ড থেকে পাওয়া যায়। এরপর আর বাবুঘাট নয়, ধর্মতলায় সব প্যাসেঞ্জার নামিয়ে ফেরার পথ ধরে ২১৩।
বারুইপুর থেকে বাবুঘাটের মধ্যে যাতায়াত করে ২১৮ নম্বর বাস। প্রতিদিন প্রায় ৪৫টি বাস চলে এই রুটে। সাধারণত রাত ন’টাতেও ধর্মতলা থেকে বারুইপুর ফেরার পাওয়া যেত আগে। কিন্তু, কয়েক দিন হলো সাড়ে সাতটার পরে ২১৮ নম্বর রুট পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
রুটের দৈর্ঘ্য অনেকটা বেশি বলেই রাতের দিকে এমন হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু তাঁরা জানলে অবাক হবেন যে হাওড়া ময়দান-শিয়ালদহ রুটের মিনিবাসও রুট কমানো বাসের তালিকায় রয়েছে। রাত ৯টা নাগাদ শিয়ালদহ থেকে হাওড়া ময়দানগামী মিনিবাসের কর্মীরাও হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরে ‘যাত্রীর অভাবের’ অজুহাতে বাস বন্ধ করে দিচ্ছেন।
বাসচালকদের অজুহাত যে নিতান্ত অমূলক এমন নয়। সত্যিই সন্ধের অন্ধকার একটু গাঢ় হলেই শহরের রাজপথে চোখে পড়ার মতো দ্রুততায় কমতে শুরু করছে যাত্রীর সংখ্যা। এর পেছনে গত কয়েক দিনের কনকনে ঠান্ডার অবদান নেহাত কম নয় বলেই মনে করছেন বাসকর্মীদের একটা বড় অংশ। যাঁরা শহরের মধ্যেই কোনও জায়গা থেকে বাসে উঠে আবার শহরেরই অন্য প্রান্তে নেমে পড়েন, এমন যাত্রী তবু পাওয়া যায়। কিন্তু একটু লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয় যাঁদের, সেই যাত্রীরা পারতপক্ষে সময় নষ্ট না করে সন্ধে হতেই বাড়ি ফেরার তোড়জোড় শুরু করে দিচ্ছেন। এর ফলে রাত আটটা বাজলে শহর ও শহরতলির বিভিন্ন রুটের বাস ক্রমশ জনশূন্য হতে শুরু করে।
কেন এমন হচ্ছে? জবাবে বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে বাস চলে। এটা ঠিক হয় কত যাত্রী হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে। যেমন সকালে ৮টা পর্যন্ত ১৫ মিনিট অন্তর কোনও বাস চললেও অফিস টাইমে ওই বাসই ৮ মিনিট অন্তর চলে। গত বেশ কয়েকদিন সন্ধের পর বিভিন্ন রুটে যাত্রীর সংখ্যা এতটাই কমে যাচ্ছে যে বাসের সংখ্যা কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা।’ বাসকর্মীরা জানাচ্ছেন, যাত্রীর সংখ্যা এত কম যে বাস চালিয়ে তেলের খরচ তোলা যাচ্ছে না।