আড়ে-বহরে বাড়ছে কলকাতা। সে সব এলাকার দায়িত্বও নিতে হচ্ছে লালবাজারকে। ২০১১ সালে দক্ষিণ শহরতলির বেহালা-হরিদেবপুর-গরফার মতো এলাকা সংযুক্ত হয়েছিল। এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের চারটি থানা মিলিয়ে প্রায় তিনশো বর্গ কিলোমিটার চলে এসেছে কলকাতার পুলিশের ম্যাপে। যা আগের থানাগুলির মোট আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ! কিন্তু সে তুলনায় লোকবল কি বেড়েছে? পরিসংখ্যান বলছে, না।
বাহিনীতে ৩৮ হাজার কর্মী থাকার কথা। সে জায়গায় কমবেশি প্রায় ১২ হাজার কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। তবু এই লোকবল নিয়েও কলকাতাকে ‘নিরাপদ শহর’-এর মুকুট পাইয়ে দিচ্ছে লালবাজার। সাফল্য সেখানেই। যদিও পুলিশকর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, ‘ঘাটতি দ্রুত মেটানো না গেলে কি এই শিরোপা ধরে রাখা যাবে? কারণ ভাঙড়ে নিত্যদিন ঝামেলা লেগেই থাকে।’
লালবাজার সূত্রে খবর, নিউ মার্কেট, বউবাজার, ময়দান, পার্ক স্ট্রিটের মতো পুরোনো থানাগুলির আয়তন ২ থেকে ৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি নয়। কর্মীর সংখ্যাও বেশি। তাই আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে থানাগুলির বড়বাবুদের তেমন একটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। ২০১১ সালে অ্যাডেড এরিয়ার থানাগুলির পরিধি কয়েকগুণ বেশিই ছিল। পরে ঠাকুরপুকুর, বেহালার মতো বড় থানা ভেঙে সরশুনা এবং পর্ণশ্রী হয়। এখনও হরিদেবপুর থানা এলাকায় কোথাও কোথাও চাষবাস হয়। খালে নৌকাও নামে। অভিযোগ, ভাঙড় এখনও গ্রাম। পুকুর, খাল-বিলও রয়েছে। বিপুল এই এলাকাই মাথাব্যথার কারণ।
আপাতত বারুইপুর পুলিশ জেলার ভাঙড় এবং কাশীপুর থানা ভেঙে তৈরি হয়েছে ভাঙড় ডিভিশন। এই দশম ডিভিশনে আছে ভাঙড়, চন্দনেশ্বর, পোলেরহাট এবং উত্তর কাশীপুর থানা। পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকা কমিয়ে মাধবপুর, বোদরা, হাতিশালা এবং বিজয়গঞ্জ বাজার থানা তৈরি হবে। বর্তমানে যে চারটি থানা তৈরি হয়েছে, শুধু সেগুলিরই পরিধি প্রায় ৩১১ বর্গ কিলোমিটার। অথচ ভাঙড় ডিভিশনের আগে কলকাতা পুলিশের থানাগুলির মোট আয়তন ৩০০ বর্গ কিলোমিটারও ছাড়ায়নি।
নতুন এই ডিভিশনের জন্য ১,৭৪৪ কর্মী বরাদ্দ হয়েছে। আর ট্যাফিক-সহ কর্মী নিয়োগ হয়েছে আড়াইশোর আশপাশে। অনেকেই আবার রাজ্য পুলিশ থেকে ডেপুটেশনে এসেছেন। কলকাতা পুলিশে ২,২০০ কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। ২৬৮ জন সাব ইনস্পেক্টরের ট্রেনিং চলছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে নতুন থানাগুলিতে নিয়োগ করা হতে পারে। কিন্তু তার পরেও ১২ হাজারের ঘাটতি থেকেই যাবে। কারণ ভাঙড় যুক্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় পুলিশকর্মীর সংখ্যা এমনিতেই বাড়বে। তাই নতুন নিয়োগের পরেও ঘাটতি কমবে না।
সদ্যনিযুক্ত এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘আপাতত যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে এলাকা নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। তবে ট্র্যাফিকের হাল যে ফিরেছে, তা এলাকাবাসী দেখতেই পাচ্ছেন।’ ভাঙড় ডিভিশনে একটি ট্র্যাফিক গার্ড রয়েছে। ঘটকপুকুর চৌমাথায় তীব্র যানজটের জেরে বাসন্তী হাইওয়ে আগে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ত। এখন হচ্ছে না। ঘটকপুকুর বাজার, পাগলাহাট বাজার, বামুনিয়া বাজারের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে আসছে।
ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিপিআর অ্যান্ড ডি)-এর তথ্য জানাচ্ছে, অনেক রাজ্যেই জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশকর্মীর অভাব রয়েছে। এ রাজ্যে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় পুলিশকর্মী ৯৭.৬৬ জন। থাকার কথা ১৬০.৭৬ জন। বিহারের অবস্থা আরও খারাপ। তাদের প্রতি লাখে ৭৫.১৬ জন রয়েছেন। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘আমাদের কাজের পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। গোয়েন্দা বিভাগও অনেক স্ট্রং। সে কারণেই নিরাপদ শহরের শিরোপা পাচ্ছে কলকাতা।’